॥ বিশেষ প্রতিনিধি ॥
সাতক্ষীরা জেলার গ্রামাঞ্চলের সব চায়ের দোকান ও শহরাঞ্চলের গলির মধ্যেকার দোকান রাত ১০টার পর বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাত ১০টার পর চায়ের দোকানে ক্যারাম খেলা, টিভি দেখা এবং তাস খেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রোববার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব কেরন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেলের সহকারী কমিশনার এস এম আকাশ এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনার কথা জানান।
————————————————————————————————
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের বিজ্ঞপ্তিতে যেটি লেখা হয়েছে সেটি নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো :
————————————————————————————————-
“ আসসালামু আলাইকুম।
ডিসেম্বর মাসের জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাতক্ষীরা জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে গ্রামাঞ্চলের সকল এবং শহরাঞ্চলের গলির মধ্যেকার সকল চায়ের দোকান রাত ১০.০ টার পর বন্ধ থাকবে এবং ১০ টার পর বন্ধ চায়ের দোকানে ক্যারাম খেলা, টিভি দেখা, তাসখেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ । এর ফলে চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া জনগণ পরিবারকে সময় দিতে পারবে, এতে করে পারিবারিক সমস্যা মিটবে এবং ছাত্রছাত্রীরা পড়ালেখায় মনোনিবেশ করতে পারবে।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অফিসার ইনচার্জ, বিজিবি, আনসার ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।”
এদিকে, চায়ের দোকান বন্ধের এই সিদ্ধান্ত বা আদেশ নিয়ে সোমবার দিনভর নানা আলোচনার ঝড় বইছে।
—————————————-
মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত :
—————————————
মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত বলেন, রাত ১০ টার মধ্যে চায়ের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা বাক স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়। একজন শ্রমজীবী মানুষ সারাদিন কাজ করার পর সে একটু বিনদনের জন্য বাড়ির পার্শ্ববর্তী চায়ের দোকানে গিয়ে বসে। সেখানে নানা মতের মানুষের সাথে মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিনোদনের খোরাক যোগায়। দিন দিন আমাদের সমাজে বিনোদন উঠে যাচ্ছে। এধরনের সিদ্ধান্ত বিনোদনের ক্ষেত্রগুলো কমে আসবে। তাছাড়া নিম্ম আয়ের মানুষগুলো গ্রামে একটি চায়ের দোকান দিয়ে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে থাকে। চায়ের দোকান গুলো রাত ১০ টায় বন্ধ হয়ে যাওয়া মানেই তাদের রুটিরুজির উপর চরম ভাবে প্রভাব পড়বে।
————————————————————–
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক এড. বেলাল :
————————————————————–
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক এড. আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, সারাদিন দিনমুজুরী দিয়ে গ্রামের একজন মানুষ স্থানীয় চায়ের দোকানে গিয়ে একটু টেলিভিশন দেখে, ক্যারাম খেলে রিক্রেশন করে। এটি তার স্বাধীনতা, সারা দিনের বিনোদন। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হয়নি। অবিলম্বে এটি প্রত্যাহার করতে হবে। এভাবে গ্রামের মানুষের স্বাধীনতা হরণ করা ঠিক হয়নি বরং প্রশাসনের উচিত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে ভিন্ন কোন পন্থা খুঁজে বের করা।
——————————————
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার যা বললেন :
——————————————
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্ঘলা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রেস নোট বা বিজ্ঞপ্তি দেয়ার বিষয়টি আমার জানানেই। এধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন মানে মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব করা। বিশেষ করে গ্রামের মানুষ রাতে চায়ের দোকানে বসে টেলিভিশন দেখবে, এর মধ্যে তার বিনোদন খুঁজে নেবে এটাই স্বাভাবিক। সর্বক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের সাথে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।