অনলাইন ডেস্ক ::
• কালবৈশাখি শিলা বৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা
• মার্চ মাসে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৩৬ ডিগ্রির বেশি
• চন্দ্রগ্রহণ ২৫ মার্চ, দেখা যাবে না বাংলাদেশ থেকে
আগামীকাল রোববার থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় ইবাদতের মাস মাহে রমজান শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীই রোজা রেখে ইবাদতের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন। এবার সৃষ্টিকর্তার ইবাদতের এই মাসটি বাংলাদেশে গরমের মাসে শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশে মার্চ মাস থেকেই গরম শুরু হয়। আবার এই মাসেই শুরু হতে যাচ্ছে মাহে রমজান। যার ফলে রমজানের আবহাওয়া কেমন থাকবে সেটা জানার আগ্রহ থাকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের।
বিশেষজ্ঞরা জানান, গত কয়েক দশকের তুলনায় এখন উত্তপ্ত বৈশ্বিক তাপমাত্রা। যার প্রভাব টের পাওয়া যায় গ্রীষ্মের শুরুতেই। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে খরতাপে এবারও পুড়বে দেশের সমগ্র অঞ্চল। গত বছর খরতাপে বাংলাদেশে বিরাজ করেছিল টানা এক মাসের দাবদাহ। তাপমাত্রা ছাড়িয়েছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কাজেই গরমের প্রথম মাসে শুরু হতে যাওয়া রমজান মাসেও আবহাওয়া নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে। এই মার্চ মাসে গরমের সাথে কাল বৈশাখি ঝড়, শিলা বৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এপ্রিল মাস উষ্ণতম হওয়ায় মার্চ মাসের গরমটা বেশিই হয়ে থাকে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
এদিকে মার্চ মাস নিয়ে বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থা বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, চলতি বছর মার্চ মাসে দেশের গড় তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকতে পারে ও বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিক হতে কিছুটা কম থাকতে পারে। এই মাসে বঙ্গপোসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে পারে। তবে তা বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই।
মার্চ মাসের প্রথম ১০ দিন যেমন থাকতে পারে আবহাওয়া
বিডব্লিউওটি জানায়, মার্চ মাসের প্রথম ১০ দিনের ৪, ৬ ও ৭ মার্চ দেশের আকাশ অনেক স্থানে আংশিক মেঘলা থেকে মেঘলা থাকতে পারে। মার্চের ৪ তারিখে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় ও দেশের অন্যত্র সামান্য কিছু এলাকায় আকস্মিকভাবে কিছুটা বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। অপরদিকে, আকস্মিকভাবে ৬ ও ৭ মার্চ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে । ৪ মার্চ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের পশ্চিম অঞ্চলে এবং ৬ ও ৭ মার্চ খুলনা বিভাগের কিছু এলাকায় বজ্রপাত হতে পারে। ৪ মার্চ রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এই সপ্তাহে দেশের আবহাওয়া বেশ চরমভাবাপন্ন থাকতে পারে, মানে দিনে গরম আর রাতে শীত থাকতে পারে।
১১ থেকে ২০ মার্চ যেমন থাকতে পারে আবহাওয়া
বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম জানায়, আগামী ১১ থেকে ২০ মার্চের অধিকাংশ সময়ই দেশের আকাশ প্রায় পরিষ্কার থাকতে পারে। তবে ১৫ ও ১৬ মার্চ দেশের কিছু এলাকায় আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। এই ১০ দিনে দেশের কোথাও উল্লেখযোগ্য বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে ১৫ ও ১৬ মার্চ দেশের উত্তরাঞ্চলের দু’এক স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া ১৮, ১৯ ও ২০ মার্চ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু এলাকায় মৃদু স্বল্পস্থায়ী তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি রাতের দিকে দেশের পশ্চিম ও উত্তর অঞ্চলে বেশ ঠান্ডা অনুভূতি হতে পারে। অনেকটা দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা পড়তে পারে।
২১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যেমন থাকতে পারে আবহাওয়া
সংস্থাটি আরও জানায়, আগামী ২১ থেকে ৩১ মার্চ এই ১০ দিন দেশের আকাশ অনেক এলাকায় আংশিক মেঘলা থাকতে পারে এবং শেষ দিকে অনেক এলাকা মেঘাছন্ন থাকতে পারে। মার্চের ২৫ তারিখের পর দেশের অনেক এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে এবং রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অনেক এলাকায় মাঝারি থেকে তীব্র বজ্রপাতের আশঙ্কা আছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে প্রায় তীব্র কালবৈশাখি ঝড়ের (৬০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে) আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ২১ থেকে ২৫ মার্চের মধ্যে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগের কিছু এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
২৫ মার্চ চন্দ্রগ্রহণ
বিডব্লিউওটি জানায়, আগামী ২৫ মার্চ একটি উপচ্ছায়া চন্দ্রগ্রহণ আছে। তবে এটি বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে না। গ্রহণ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে ও শেষ হবে বিকেল ৩টা ৩২ মিনিটে। এই সময় বাংলাদেশে দিন থাকায় গ্রহণটি দেখা যাবে না। ওই সময় পৃথিবীর যে অংশে রাত থাকবে সেই অংশ থেকে গ্রহণটি দেখা যাবে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর মার্চের আবহাওয়া নিয়ে যা বলছে
রমজান মাসের আবহাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাস হচ্ছে আমাদের কালবৈশাখীর সময়। মার্চ মাসের গরমটা এপ্রিলের গরমের কাছাকাছি বলা যায়। এপ্রিল যেহেতু আমাদের উষ্ণতম মাস, সেহেতু মার্চ মাসে গরমটা বেশিই হয়। তবে এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি গরম থাকে। মার্চ থেকে গরমটা শুরু হয় বেশি। এপ্রিলে গিয়ে চূড়ায় পৌঁছায় এবং মে মাস থেকে তাপমাত্রা কমা শুরু হয়। আর জুন থেকে বর্ষাকাল শুরু হয়। মার্চ মাসে যেহেতু গরম থাকবে সুতরাং রমজানটা আমাদের সেভাবেই পালন করতে হবে।’
কালবৈশাখি ঝড়ের মধ্যে হবে বৃষ্টিপাত
আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘মার্চ মাসে যা বৃষ্টিপাত হবে সেটা হবে কাল বৈশাখি ঝড়ের মধ্যে। এই সময়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি সম্ভবই না। এটাই হলো ক্লাইমেট। শুধু কাল বৈশাখীর ঝড়ের সময় বৃষ্টি হবে। কাল বৈশাখী ঝড়ও যে আবার প্রত্যেকদিন হবে সেটারও কোনো গ্যারান্টি নেই। হয়তো সপ্তাহে কোনো এক জায়গায় একবার হতে পারে। আবার দুই-তিনটা জোনেও হতে পারে। আবারও কিছু জায়গা ঝড়-বৃষ্টি পাবেই না। যেমন অন্য জায়গায় ঝড়-বৃষ্টি হলেও নাটোরে হবে না। এরকম গ্যাপ পড়তে পারে। কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টি হলে সব জায়গায় প্রভাব পড়ে না। এই বৃষ্টি হলে সুবিধা হচ্ছে, যখনই বৃষ্টিপাত হয়, তখন বজ্রপাত হয়, বাতাস থাকে এবং যেই জায়গায় ঝড়-বৃষ্টি হবে সেখানে তাপমাত্রা কমে আসে। এ ছাড়া কাল বৈশাখী ঝড় হলে শিলা বৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়ে থাকে। তবে সব কাল বৈশাখী ঝড়-বৃষ্টিতে শিলা বৃষ্টি হয় না।
মার্চে ঘূর্ণিঝড় তৈরির সম্ভবনা বেশি থাকে
সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি এবং ঘূর্ণিঝড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ সময়ে ঘূর্ণিঝড়ও তৈরি হয়। মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাস হলো আমাদের ঘূর্ণিঝড়ের সময়। এই সময়ে সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্য যেকোনো সময়ের চাইতে বেশি থাকে।’
মার্চে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৩৬ ডিগ্রির ওপরে
মার্চ মাসের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ কত হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, ‘মার্চ মাসে যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে দেশের বেশিরভাগ জায়গার তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি থাকতে পারে। ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলেই আমরা সেটাকে তাপপ্রবাহ বলে থাকি। মার্চ মাসে তাপপ্রবাহ হতে পারে এটা নিশ্চিত। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে সবচেয়ে বেশি তাপপ্রবাহ হয়। গত বছরের এপ্রিলে শুরু হয়ে মে মাস পর্যন্ত প্রায় এক মাস ৫ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। যেহেতু বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে গেছে, সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই তাপমাত্রা বেশি থাকতে পারে।’