বি. এম. জুলফিকার রায়হান ::
বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ করে বিগত ৫ বছর ধরে মাছ চাষ করায় তালার মুড়াগাছা সুড়িখালি বিলের প্রায় ৭শ বিঘা জমিতে ধান চাষ ব্যহত হচ্ছে। এই বিলে ধান চাষাবাদ করতে না পারায় একদিকে জমি মালিক ও কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, অপরদিকে তালা উপজেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় বিরুপ প্রভাব পড়ছে। বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে স্বার্থান্বেসী মহল মাছ চাষ করায় ক্ষতিগ্রস্থ জমি মালিক ও কৃষকরা ক্ষুব্ধ রয়েছে। মাছ চাষীর দখল থেকে সরকারি জমি উদ্ধার পূর্বক সুড়িখালি বিলের পানি নিষ্কাশন করার জন্য এলাকার কৃষকরা গত বছর থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করে আসছিল। চলতি আমন মৌসুমে উক্ত বিলে ধান চাষাবাদ করার জন্য মুড়াগাছা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ. ওয়াদুদ’র নেতৃত্বে কৃষকরা আবারও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যলয় সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দেয়া শুরু করেন। এরফলে এবার উক্ত সুড়িখালি বিল ধানচাষের আওতায় আনার জন্য প্রশাসন কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। বুধবার (৩১ জুলাই) সকালে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজন্ব) কাজী আরিফুর রহমান, তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার এবং তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল আমীন সহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছেন।
মুড়াগাছা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার সুজাত আলী’র ছেলে প্রভাষক রবিউল আওয়াল জানান, খেশরা ইউনিয়নের মুড়াগাছা মৌজার সুড়িখালি বিলে দুইশতাধিক কৃষকের প্রায় ৭শ বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। এই বিলের অধিকাংশ জমিতে আমন এবং বোরো ধান চাষ হয়। কিন্তু বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে বিল তলিয়ে ধানের চারা নষ্ট হয়ে যায়। তিনি জানান, এই বিলের পানি সরকারি জমির উপর দিয়ে শালিখা নদীতে নিষ্কাশিত হতো। কিন্তু পানি নিষ্কাশন’র সহজ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত সরকারি ওই জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার পর গ্রহিতা তা অবৈধভাবে বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে ওই জমির উপর বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে সেখানে মাছ চাষ শুরু করে স্থানীয় সৈয়দ সেকেন্দার আলী। যেকারনে বিগত ৫ বছর ধরে বিলটি জলাবদ্ধ হয়ে আসছে এবং জমি মালিক ও কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এবিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ. ওয়াদুদ, মিরাজ সরদার, তপন সেন, নুর মোহাম্মদ সরদার ও সিদ্দিক শেখসহ একাধিক কৃষক জানান, বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত সরকারি জমি বন্দোবাস্ত নিয়ে সেখানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় বিলের ওই অংশ দিয়ে শালিখা নদীতে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে পড়েছে। যেকারনে সুড়িখালি বিল জলাবদ্ধ হচ্ছে এবং শ্রাবণ মাসের অর্ধেক চলে গেলেও ঐ বিলের জমির মালিকগন এখনও ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারেনি।
এবষিয়ে খেশরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম লাল্টু বলেন, পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদি থেকে যাচ্ছে সুড়িখালি বিলের জমি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বারবার জানানো হলে আজ প্রশাসনের কর্মকর্তাগন সরজমিনে আসেন এবং পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।
এবিষয়ে তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, সুড়িখালি বিলের পানি নিষ্কাশন করে প্রয় ৭শ’ বিঘা আয়তনের বিল ধান চাষের আওতায় আনার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য ২টি পথ রয়েছে। এরমধ্যে সহজ এবং সুবিধাজনক পথ হচ্ছে- বিলের উত্তর পাশ দিয়ে সরকারি পিচের রাস্তার উপর কালভার্ট নির্মান করে নিচ দিয়ে অপর পাশের সরকারি জমির উপর দিয়ে শালিখা নদীতে পানি নিষ্কাশন করা। আমরা সেইভাবে উদ্যোগ নিয়েছি এবং ২/৩দিনের মধ্যে পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু করা হবে।
###