বি. এম. জুলফিকার রায়হান ::
গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সংঘটিত তালা উপজেলার রাজনৈতিক সহিংসতা বেশ নিয়ন্ত্রনে এসেছে। উপজেলা বিএনপি, জামায়াত ইসলামী সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও দলগুলোর অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নিরলস পরিশ্রম, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা প্রদানে পাহারা ব্যবস্থা এবং সেনাবাহিনীর তালা ক্যাম্পের টহল জোরদার হওয়ায় পরিস্থিতি এবং সাধারন মানুষের জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং থানা পুলিশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পদক্ষেপ না থাকায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ব্যক্তিগত শত্রুতায় জমি দখল, বাড়ি ভাংচুর, চুরি ও সরকারি গাছ কাটা সহ নানান অপরাধ এখনও সংঘটিত হচ্ছে। ব্যক্তিগত দ্বন্ধের জেরে সংঘটিত এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রনে সেনাবাহিনীর টহল থাকলেও অপরাধিদের গ্রেফতার ও পুলিশী কার্যক্রম কার্যকর না থাকায় অপরাধ বন্ধ হচ্ছেনা।
সূত্রে জানাগেছে, গত ৫ আগস্ট গভীর রাতে জাতপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন বিশ^াস’র নেতৃত্বে তার ভাই আব্দুল মাজেদ বিশ^াস, ফারুক বিশ^াস, স্ত্রী আওয়ামীলীগ নেত্রী হোসনেয়ারা বিশ^াস, চাচাতো ভাই আমিনুর রহমান বিশ^াস ও মিজানুর রহমান বিশ^াস গং ভাড়াটিয়া দূর্বৃত্তদের সাথে নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রামরাজত্ব সৃষ্টি করে। এসময় তারা একই গ্রামের আব্দুস সামাদ ও আনোয়ারা বেগমের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলা চালিয়ে বাড়ি দুটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে ঘরের মালামাল লুটপাট করে। এঘটনায় বাঁধা দিতে গেলে আব্দুস সামাদ ও তার প্রতিবন্ধী স্ত্রী রাহেলা বেগমকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। ঘটনার সময় মৃত. আনোয়ারা বেগমের অসহায় মেয়ে পারভীন খাতুন স্বামীকে নিয়ে বাড়ি ভাংচুরে বাঁধা দিতে গেলে সন্ত্রাসী তান্ডবেরমুখে তারা সামনে যেতে সাহস পায়নি। পরদিন সকালে হামলাকারী দূর্বৃত্তরা দীর্ঘ বছরের পুরাতন দু’টি ঘরের আসবাবপত্র সহ ঘরের দেয়ালের ইট, টিনের চাল বেড়া লুট করে নিয়ে যায় এবং একই সাথে সামাদ বিশ^াস ও তার স্ত্রীকে গ্রাম থেকে চলে যাবার জন্য হুমকি প্রদান করে। সেই থেকে সামাদ বিশ^াস তার প্রতিবন্ধী স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ২দিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলেও এলাকার কেহ তাদের আশ্রয় দিতে সাহস পায়নি। অপরদিকে আওয়ামীলীগ নেত্রী হোসনেয়ারা বিশ^াসের নেতৃত্বে দূর্বৃত্তরা সোমবার (১২ আগস্ট) সকালে শুকদেবপুর গ্রামে বিরোধপূর্ন ১ একর ১৯ শতক জমি সহ পুকুর দখল করে লুটপাট করে। এরপর আওয়ামীলীগ ছেড়ে ৫ আগস্ট বিএনপি কর্মী বনে যাওয়া দূর্বৃত্ত ফারুক বিশ^াস জাতপুর-মদনপুর সড়কের পাঁচরোখী গ্রামে সরকারি রাস্তার উপর থেকে বিভিন্ন প্রজাতীর প্রায় ২ লক্ষ টাকা মূল্যের ৪/৫টি সরকারি গাছ কেটে নিয়ে যায়। এসময় এলাকার লোকজন বাঁধা দিতে গেলে তাদের হুমকি প্রদান করে এবং আরও গাছ কাটবে বলে আস্ফালন করে। দূর্বৃত্ত ফারুক বিশ^াস ও হোসনেয়ারা বিশ^াসদের অত্যাচারে এলাকার মানুষ আতংকিত হয়ে পড়েছে।
এছাড়া জমি দখল ঘটনার ধারাবাহিকতায় উপজেলার অন্যান্য গ্রামের মতো তালার চরগ্রামে মৃত. মাহবুবুর রহমানের ৪০ বছরের দখলীয় জমি জবর করে প্রতিপক্ষ একই গ্রামের মোজাম্মেল ফকির গং। মাহবুবুর রহমানের ভুক্তভোগী ছেলে তামিম শেখ জানান, তাদের ভোগদখলীয় ও রেকর্ডীয় ভিটে বাাড়ির জমি নিয়ে বিরোধের জেরে বিভিন্ন সময় হুমকি প্রদান করা হচ্ছিল। গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) ভোরে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে মৃত মোশারফ ফকিরের ছেলে মোজাম্মেল ফকিরের নেতৃত্বে মোক্তবা ফকির সহ ১২/১৩জন দূর্বৃত্ত হামলা চালিয়ে ঘর ভাংচুর সহ জমি দখল করে ঘেরা-বেড়া দিয়ে দেয়। বিষয়টি জানতে পারার পর প্রতিবাদ করলে তামিমকে নানাবধ হুমকি প্রদান করা হচ্ছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
এভাবে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৩/৪ শ’ পরিবারের জমি দখল সহ ঘরবাড়ি ভাংচুর ও লুটতরাজ চালাচ্ছে প্রতিপক্ষ দূর্বৃত্তরা। এঘটনায় আতংকিত মানুষ দ্রুত আইনী ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এবিষেয়ে সেনাবাহিনীর তালা ক্যাম্প কমান্ডার মেজর কামরুল ইসলাম জানান, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। যেখান থেকে অভিযোগ আসছে সেখানেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সকল অপরাধিরা বিচারের আওতায় আসবে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা সহ ক্ষতিসাধন রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
##