ডেস্ক রিপোর্ট ::
‘গুড়পুকুরের মেলা’। সাতক্ষীরার সাড়ে ৩০০ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এই মেলা। প্রতিবছর ভাদ্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ভাদ্র ‘শ্রীশ্রী মা মনসা দেবী’র পূজা উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ‘গুড়পুকুরের মেলা’। এই ‘গুড়পুকুরের মেলা’ গ্রাম বাংলার লোকজ সংষ্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যই এখনও পর্যন্ত সাতক্ষীরার সংস্কৃতির মূলধারাটি বহন করে চলেছে।
লৌকিক আচার আচরণ, বিশ্বাস আর পৌরাণিকতায় সমৃদ্ধ সাতক্ষীরা জেলা। নানা কিংবদন্তির প্রবাহধারায় সজীব এখানকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বঙ্গোপসাগরের আঁচল ছোঁয়া ‘সুন্দরী সুন্দরবন’, আর সুন্দরবনকে বুকে নিয়ে সমৃদ্ধ এখানকার প্রকৃতি, এমনকি অর্থনীতিও। সুন্দরবনের চোখ জুড়ানো চিত্রল হরিণ, বিশ্ববিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার (ডোরাকাটা বাঘ), বানর, কুমির, শুকর, অজগর, চোখ জুড়ানো নানা রঙের পাখি, বনমোরগ, সুন্দুরী গাছ, পশুর গাছ, বাইন গাছ, গড়ান গাছ, গেওয়া গাছ, গোলপাতা, হেতাল গাছসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি থেকে শুরু করে নদ-নদী-খাল, বনবিবি বা বনদেবী, মোঘলীয় পুরাকীর্তি, অসংখ্য প্রতœত্ত্বনিদর্শণ, বারো ভূঁইয়ার অন্যতম রাজা প্রতাবাদিত্যের রাজধানী, সতীর একান্নখ-ের একাংশ শ্রীশ্রী যশোরেশ্বরী মন্দির, শাহী মসজিদ, শাহী মসজিদের সামনে ১৬ হাত মানুষের কবর, জাহাজঘাটা, মাইচ্চম্পার দরগাহ, ৩০০ বছরের পুরাতন মায়ের বাড়ির পঞ্চমন্দির, বিভিন্ন পুরাকালের কাহিনী, জারী-সারী, ভাটিয়ালি, পালাগান, পালকীর গান, কবির লড়াই, পুতুল নাচ, লাঠি খেলা, এসবের মধ্যেই সাতক্ষীরার মানুষের আত্মীক পরিচয় গ্রন্থিত। এখানে জন্মেছেন দেশ বরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, কণ্ঠশিল্পী, চিত্রকর, জন্মেছেন জীবন সংগ্রামে ঋদ্ধ সংগ্রামী মানুষ। শোষণ-নিপীড়ণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখর আত্মত্যাগী বীর। তিঁতুমীরের বাঁশের কেল্লার হয়ে যেমন লড়েছেন, তেমনি মহান ভাষা আন্দোলনে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধেও বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
গ্রাম বাংলার লোকজ ইতিহাস ও ঐতিহ্যই এখনও পর্যন্ত সাতক্ষীরার সংস্কৃতির মূলধারাটি বহন করে চলেছে। খুব সহজেই এখানে মিলিত হয়েছে লৌকিক আচার-আচরণের সাথে পৌরাণিতত্ত্বের। যেন দুটো নদীর সম্মিলিত এক বেগবান স্রোতধারা। বছরের প্রায় প্রতিটি সময় ধরে অগণিত মেলা বসে সাতক্ষীরায়।
সুন্দরবনের সাগরদ্বীপ দুবলা চর থেকে শুরু করে খুলনা, যশোর, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিং, বিক্রমপুর, ফরিদপুর এমনকি একসময় পশ্চিমবঙ্গেও বিভিন্ন জেলায়ও এর প্রভাব ছিল ব্যাপক। সাতক্ষীরায় জেলার শুধু নয় দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় লোকজ সংষ্কৃতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরা মেলাটি বসে সাতক্ষীরা শহরেই। পলাশপোলে গুড় পুকুরের পাড়ে গুড়পুকুর মেলা।
গুড়পুকুর মেলা। এই মেলাটির উৎপত্তি খুঁজতে পৌরাণিক ইতিহাসে কথিত আছে, সাতক্ষীরার জমিদার বংশীয় পরিবারের পূর্বপুরুষেরা কুলিন ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁদরে পূর্বপুরুষদের জনৈক চৌধুরী বংশীয় জমিদার ক্লান্ত অবস্থায় শেষ ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমে সাতক্ষীরার পলাশপোল বিরাটাকার বটগাছ তলায় বটের ছায়ায় একটু জিরিয়ে নেয়ার জন্য বসলেন। বটের ছায়ায় বসতে না বসতেই ঘুম এসে গেল তাঁর। বটের শেকড়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি। বট গাছের ছায়ায় গাছতলায় ঘুম। তখন বটগাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের তীব্র কিরণ এসে পড়ল জমিদারের মুখে। রৌদ্র্যের তাপে ঘুম ভেঙে যেতে লাগলো তাঁর। অস্বস্থি বোধ করলেন তিনি। সেই সময় বট গাছের মগডালে ছিল এক পদ্মগোখরো সাপ, সে তা লক্ষ করল। আস্তে আস্তে পদ্মগোখরোটি নেমে এলো নিচে। যে পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যরশ্মি এসে জমিদারের মুখে পড়েছে, ঠিক সেখানে ফণা তুলে দাঁড়ালো পদ্মগোখরোটি। ফণার ছায়া এসে পড়ল জমিদারে মুখে। তিনি আরাম পেয়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়লেন।
কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে থাকার পর আবার ঘুম ভেঙে গেল। এর মধ্যে ক্লান্তি অনেকটা দূর হয়েছে তাঁর। চোখ মেলে বটের পাতার দিকে তাকালেন। হঠাৎ দেখতে পেলেন একটি পদ্মগোখরো সাপ ফণা তুলে সূর্য কিরণকে আড়াল করে আছে। এবার ফণাটি একটু নড়ে উঠলো, দুলে উঠলো গাছের পাতা। ফণা নামিয়ে সাপটি হারিয়ে গেল ডালে ডালে পাতায় পাতায়। আবার সূর্যরশ্মি এসে পড়ল জমিদারের মুখে।
তখন তিনি এলাকার সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ডেকে বললেন, এখানে ‘শ্রীশ্রী মা মনসা দেবীর পূজা’ করতে হবে। সেদিন ছিল ভাদ্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ভাদ্র। ১২শ’ বঙ্গাব্দের গোড়ার দিকের কোন এক বছর। তখন থেকেই সাতক্ষীরা শহরের প্রাণ কেন্দ্র পলাশপোল গ্রামের সেই বিরাটাকার বটবৃক্ষের তলায় প্রতিবছর ভাদ্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ভাদ্র “শ্রীশ্রী মা মনসা দেবী”র পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
গুড়পুকুর পাড়ের দক্ষিণে বটগাছতলায় শুরু হয় ‘শ্রীশ্রী মা মনসা দেবীর পূজা’। আর ৩১ ভাদ্র শ্রীশ্রী মা মনসা দেবীর পূজা উপলক্ষে মেলা বসে। এই মেলার নাম হয় ‘গুড়পুকুর মেলা’। গুড়পুকুরের নামানুসারেই মেলার নামকরণ করা হয়েছে ‘গুড়পুকুরের মেলা’। মেলাটির বয়স অন্তত সাড়ে ৩০০ বছর। এই ‘গুড়পুকুর মেলা’ নামকরণের পিছনে রয়েছে ইতিহাস ও কাহিনী।
মেলার নাম-গুড়পুকুর মেলা। এই মেলার নামকরণের অনেক কিংবদন্তী শোনা যায়। বটগাছটার উত্তরে বিশাল দিঘি সদৃশ একটা পুকুর আছে। ওই পুকুরটার নাম ‘গুড়পুকুর’। তারই নামে মেলা। কিভাবে হলো এই নামকরণ? কথিত আছে, শ্রীশ্রী মা মনসা দেবীর পূজার উপলক্ষে প্রচুর পরিমাণ ভক্তদের আনা নানা রকমের মিষ্টি দ্রব্য ও বাতাসা ভোগ স্তুপে পরিণত হতো। ভক্তরা মিষ্টি বা বাতাসা প্রসাদ গ্রহণ করলেও আরও অধিক পরিমাণ মিষ্টি ও বাতাসা থেকে যেত। যা খাওয়ার মানুষ পাওয়া যেত না। তখন ওই ভক্তদের আনা মিষ্টি বা বাতাসা ফেলা হতো শ্রীশ্রী মা মনসা বেদীর বটগাছের উত্তর পাশের ওই পুকুরে। ওই সময় ওই পুকুরের পানি গুড়ের মত মিষ্টি হয়ে যেত। এলাকার মানুষ তখন ওই পুকুরকে ‘গুড়পুকুর’ বলে ডাকতো। সেই থেকে ওই পুকুরের নামকরণ হয়ে যায় ‘গুড়পুকুর’। আর ‘গুড়পুকুরকে কেন্দ্র করে মেলার নাম করন ‘গুড়পুকুর মেলা’ হয়ে আসছে।
পলাশপোল এলাকার প্রবীণদের কাছ থেকে আর এক রকম কিংবদন্তী শোনা যায়। এখানকার অত্যন্ত প্রবীণ পরিবারদের অন্যতম চৌধুরী পরিবার। এই পরিবারের পূর্বপুরুষেরা কুলিন ব্রাহ্মণ ছিলেন এবং তারা ছিলেন গৌর বর্ণের অধিকারী। উত্তরাধিকার সূত্রে গৌরবর্ণের অধিকারী ছিলেন তারাও। গৌরবর্ণের অধিকারী চৌধুরীরা ওই পুকুরের মালিক বিধায় পুকুরের নাম হয়েছে ‘গুড়পুকুর’। ‘গৌড়’ শব্দটি লোক মুখে ঘুরতে ঘুরতে ‘গুড়ে’ শব্দে রূপান্তরিত হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
সেদিনের গুড়পুকুরের মেলা অনেক বড় আকারে অনুষ্ঠিত হতো। সাতক্ষীরা শহরের প্রায় ৩ থেকে ৫ কি.মি. ব্যাপি গুড়পুকুরের মেলা বসতো। গুড়পুকুরের মেলা শুরু হবার অর্থাৎ ৩১ ভাদ্র শ্রীশ্রীমনসা পূজার সময় আসার দেড় ২ মাস আগ থেকে শুধু সাতক্ষীরা জেলা নয় দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে সাজ সাজ রব শুরু হয়ে যেত মেলার আয়োজন। বিশেষ করে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহা, বাগেরহাট, নড়াইল, সাতক্ষীরার চারা-কলম, সবচেয়ে আকর্ষণ ছিল কাঠের তৈরী বিভিন্ন কাঠের তৈরী আসবাবপত্রের মধ্যে, কাঠের ফুলদানি, পুতুল, শো পিস সামগ্রী, কাঠের পিড়ি, দেলকো, বেলন, রুটি বেলা পিঁড়ি, বসার পিঁড়ি, আলনা, আলমারী, চেয়ার টেবিল, ওয়ারড্রব, শোকেস, ড্রেসিং টেবিল, খাট-পালঙ্ক প্রভৃিত।
কারুশিল্পী নজরুল ইসলামের মূল্যবান ও মনোরম কারুকার্য সম্পন্ন সেগুন কাঠের পালঙ্ক। যা প্রতিটি মনোরম কারুকার্য সম্পন্ন সেগুন কাঠের পালঙ্ক বিক্রি হতো লক্ষাধিক টাকায়। সেই পালঙ্ক এক নজর দেখার জন্য মানুষের ভিড় সামলানো কঠিন হতো।
ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ বিভিন্ন বিভাগ, জেলা, শহর, বন্দর, নগর ও গ্রাম থেকে আসতো মনোহারী সামগ্রী, মনোহরী দ্রব্যাদি, স্টেশনারি, শিশুতোষ খেলনার দোকানদাররা। শিশু ও কিশোরদের নানা রকমের খেলনা।
মনসা পূজা ৩১ ভাদ্র হলেও মেলা চলতো আশ্বিন মাসের প্রায় শেষ পযর্šÍ। লক্ষ মানুষের সমাগমে, হিন্দু মুসলিম জাতি ধর্ম বর্ণ নারী পুরুষ নির্বিশেষে এ এক মহামিলন স্থলে পরিণত হতো এই মেলা। মেয়েরা এই গুড়পুকুর মেলা উপলক্ষে বাবার বাড়িতে নাইয়োর আসতো। নাতি, নাতনি, মেয়ে জামাইয়ের মেলায় বেড়ানো ছিল এক বড় অনাবিল আনন্দময় ও উচ্ছ্বাসের।
এছাড়াও আসতো দেশীয় ফল-মুল, আখ, বাতাবী লেবু, ইলিশ মাছ। মেলায় এসে আখ-ইলিশ-বাতাবি লেবু ছাড়া কেউ বাড়ি ফিরত না। ছিল বাঁশ ও বেত শিল্পের নানা দ্রব্য, ধামা, কুলা, ঝুড়ি, খাবার ঢাকনি, কর্মকারদের লৌহ শিল্পের দ্রব্যাদি, লোহার তৈরী দা, বটি, নারকেল কোড়ানি, কুড়াল, কাস্তে, খোন্তা, কোঁদাল, শাবলসহ প্রভৃতি। মোটকথা নিত্য ব্যবহার্য সবকিছুই মেলাতে ওঠতো।
বসতো অসংখ্য মিষ্টির দোকান। বাহারী ও রংবেরংয়ের মিষ্টির পসরা সাজিয়ে বসতো ময়রা দোকানীরা। দেশীয় তৈরী নানা রকমের খাবার, জিলাপী, ছানার সন্দেশ, খেঁজুর গাছের নলেন গুড়ের সন্দেশ ও জোড়া সন্দেশ, ছানার জিলাপী, বন্দিয়া, মিহিদানা, গজা, রসমণি, রসগোল্লা, রসমালাই, সরপুরিয়া, ছানা, কদমা, বাতসা, মিষ্টিমুড়ি, ছোলা ভাজা, বাদাম ভাজা, চানাচুর, ঝুড়ি ভাজা, কত রকমের খাবার। ছিল মিষ্টি পানের হাজরো বাহারী আয়োজন। গুড়পুকুর মেলা উপলক্ষে দুই মাসাধিককাল শহরের মানুষের আর অন্য কোন ব্যস্ততা থাকতো না। প্রতিবছর মানুষ গুড়পুকুর মেলার জন্য অপেক্ষা করতো। আর দিন গুনতো কবে আসবে, ‘৩১ ভাদ্র’ কবে বসবে, ‘গুড়পুকুর মেলা’।
‘গুড়পুকুর মেলা’র বড় আকর্ষণ ছিলো, পুতুল নাচ, যাত্রা, নাগরদোলা, সার্কাস, সার্কাস খেলায় বাঘ, হরিণ, বানর, থাকত খাঁচায় ভরা। মৃত্যু কূপ বা মরণ কূপ, আসলাম খানের মটর সাইকেল চালনা। সিনেমা হলে এক টিকিটে দুটি শো। কি ছিল না! গুড়পুকুর মেলাকে ঘিরে সারা সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল, কামালনগর, ইটাগাছা, রসুলপুর, মুনজিতপুর, কাটিয়া, পুরাতন সাতক্ষীরা, আলীপুর, কদমতলা, বর্তমানের শহীদ কাজল সরণি, শহীদ নাজমুল সরণি, পাকাপোলের রাস্তা, মোটকথা সাতক্ষীরা শহরময় ছড়িয়ে থাকতো মেলা। সাতক্ষীরা শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত একসময়ের খরোস্রোতা প্রাণসয়ের নদীতে নৌকায় করে আসতো মেলার সার্কাস, যাত্রা, পুতুল নাচ, কাঠ, চারা কললের পসরা ও জিনিসপত্র।
হাতি আসতো মেলার আরো অনেক আগে। এসেই শহর ঘুরে বেড়াতো আর জানান দিত, সার্কাস এসে গেছে। ছোটবেলায় উপভোগ করা মেলার এসব সময়ের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। বর্তমান সাতক্ষীরার তরুণ সমাজ যা কল্পনাও করতে পারবে না। মেলা বিস্তৃত হয়েছিল দক্ষিণে আলীপুর পর্যন্ত আর উত্তরে কদমতলা-মাধবকাটি পর্যন্ত। আর পূর্ব দিকে পাটকেলঘাটা পর্যন্ত।
২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ঘটে ৩শ’ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরা ‘গুড়পুকুর মেলা’র সর্বনাশাকা-। রাতে সাতক্ষীরার রক্সি সিনেমা হলে এবং সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে হঠাৎ বোমা হামলা হয়। তখন স্টেডিয়ামে চলছিল সার্কাস, দর্শকরা উপভোগ করছিলেন আনন্দে। হঠাৎ বোমা হামলায় সার্কাস ল-ভ- হয়ে যায়। চারিদিকে মানুষের ছুটাছুটি, কান্না ও ভয়াল দৃর্শ্য। এই বোমা হামলায় শিশুসহ মৃত্যুবরণ করেন ৩জন। বন্ধ হয়ে যায় তিন’শ বছরের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহি গুড়পুকুরের মেলা অনির্দিষ্ট কালের জন্য।
২০১০ সালে সাতক্ষীরার তৎকালীন জেলা প্রশাসক, কবি-সংস্কৃতজন মো. আব্দুস সামাদ সাহস নিয়ে এগিয়ে আসেন। গুড়পুকুরের মেলা আবার শুরু করেন তিনি ছোট্ট একটি গ-ির মধ্যে। শুরু হলেও একে একে মেলা শ্রী হারিয়ে ফেলতে থাকে। স্থানাভাবে স্থান পরিবর্তন হয়। পলাশপোলের গুড়পুকুরের মেলা চলে যায় সাতক্ষীরা শহরের মধ্যে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে। ক্রমশঃ লোকজ ঐতিহ্যবাহি গুড়পুকুরের মেলা হয়ে ওঠে শহুরে মেলা। করোনার কারণে গতবছর মেলা হয়নি। এবছরও সময় চলে গেলো। মেলাটির ব্যবস্থাপনা করে থাকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন আর পৌরসভা সম্মিলিতভাবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, আজ (২০ সেপ্টেম্বর) বুধবার সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে গুড়পুকুরের মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, এবার ১৫ দিনের জন্য গুড়পুকুরের মেলার পারমিশন দেয়া হয়েছে।