ডেস্ক রিপোর্ট ::
দেবহাটার কয়েকটি গ্রাম চিংড়ি চাষের পাশাপাশি ঘেরের ভেড়িতে অসময়ে তরমুজ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেক বেকার যুবক কৃষক। উপজেলার বিভিন্ন বিলে মৎস ঘেরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ৪০ জনের মত বেকার যুবক এই তরমুজ চাষের সাথে যুক্ত আছে। এই চাষ করতে যেমন বাড়তি কোন জমি লাগছে না, লাগছে না কোন জমির হারি। কৃষক আমিরুল ইসলাম, এমাদুল ইসলাম, হবিবর, কামরুলসহ আরো ৪০ জন কৃষক এখন চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
কৃষক আমিরুল ইসলাম বলেন, আমি দ্বিতীয় বারের মতো এই তরমুজের চাষ করছি। গত বছরের তুলনায় এই বছর তরমুজের ফলন অনেক ভালো। এখন পর্যন্ত ৪০ মন বিক্রি করেছি। এখনো যা আছে তাতে ২০ মনের মতো বিক্রি করতে পারবো বলে আশাবাদী। কৃষক এমাদুল ইসলাম বলেন, আমি এই বছর প্রথম ৪০ বিঘা ঘেরের ভেড়িতে চাষ করছি, চাষ করে বুঝলাম এটি একটি লাভজনক ফসল। খরচের তুলনায় ৩ ডাবল বিক্রি করা যায়। আমি এটা শখ করে চাষ করেছি। আত্মীয় স্বজনের সবাইকে দেওয়ার পাশাপাশি এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করছি। এখনো যা আছে আশা করি এখনো ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো।
দেবহাটা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেবহাটা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উদ্যোগে ৪০ জন কৃষকের মাঝে ২টি প্রকল্পে গত ৩ মাস পূর্বে কৃষক ও বেকার যুবকদের মাঝে বিনামূল্যে তরমুজের বীজ সরবরাহ করা হয়। দেবহাটা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী মোস্তাক আহমেদ, কাজল হোসেন, ইউনূছ আলী, কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ৫টি প্রদর্শনীসহ ৪০টা কৃষকের মোট চারটি জাতের বীজ প্রদান করা হয়। সেগুলো হলো তৃপ্তি, ব্লাক বেবি, সুগারকুইন ও বাংলালিংক। প্রতি বিঘা জমিতে ১০০ গ্রাম থেকে ১শত ২০ গ্রাম বীজ রোপন করা যায়। এই অপসিজন তরমুজ বাজারে প্রতি কেজি ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করা হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীরাও পড়াশুনার পাশাপাশি তাদের ঘেরের নিজস্ব জমিতে এই তরমুজের চাষে ঝুকছে।
এবিষয়ে উপজেলার ঘলঘলিয়া গ্রামের কলেজ পড়ুয়া ছাত্র রনি বলেন, বেকার থাকায় পড়াশুনার পাশাপাশি দেবহাটা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাক আহম্মেদ তাকে এই অপসিজন তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করে। তার পরামর্শে সে তার নিজস্ব ১ বিঘা জমিতে অপসিজন তরমুজের চাষ করেছে। চাষ করে এখন লাভের মুখ দেখেছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাক আহম্মেদ জানান দেবহাটা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই অপসিজন তরমুজ চাষের পদ্ধতি ও বিভিন্ন নিয়ম সম্পর্কে কৃষকদেরকে অবহিত করেছেন। দেবহাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান বলেন, দেবহাটা উপজেলায় এই তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। আগামীতে আরো বৃহৎ আকারে এই তরমুজ চাষে কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হবে।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসাদুজ্জামান জানান, দেবহাটার ভূমি কৃষি বান্ধব। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে কৃষির ধরণও পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন এই ধরনের ফসল চাষের মাধ্যমে আমাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হচ্ছে। আগামীতে এই এলাকার কৃষকদেরকে এই তরমুজ চাষে আরো বড় আকারে করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করা হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
##