• Login
Sunday, May 11, 2025
No Result
View All Result
Voice of Satkhira logo
Advertisement
  • জাতীয়
  • সাতক্ষীরা সদর
  • কলারোয়া
  • তালা
  • দেবহাটা
  • কালীগঞ্জ
  • আশাশুনি
  • শ্যামনগর
  • তথ্যপ্রযুক্তি
  • খেলা
  • স্বাস্থ্য
  • সুন্দরবন
No Result
View All Result
  • জাতীয়
  • সাতক্ষীরা সদর
  • কলারোয়া
  • তালা
  • দেবহাটা
  • কালীগঞ্জ
  • আশাশুনি
  • শ্যামনগর
  • তথ্যপ্রযুক্তি
  • খেলা
  • স্বাস্থ্য
  • সুন্দরবন
No Result
View All Result
Voice of Satkhira
No Result
View All Result

সুন্দরবনে পোকা–রহস্য

এই পোকাকে মথ পোকার লার্ভার মতো মনে হয়। মথ দেখতে অনেকটা প্রজাপতির মতোই, কিন্তু প্রজাপতি না। এই পোকা যে গাছে ডিম পাড়ে, লার্ভাগুলো সে গাছেরই পাতা খায়। ১০ দিনের মতো গাছের পাতা খায় এরা। মথ সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে মৌমাছির মতো একসাথে থাকে।

8 months ago
in জাতীয়, ফটো গ্যালারি
0 0
সুন্দরবনে পোকা–রহস্য
0
SHARES
0
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

অনলাইন ডেস্ক ::

সুন্দরবনে গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ছিল নিষিদ্ধ মৌসুম। তবু বন বিভাগের বিশেষ অনুমতি নিয়ে আমরা গত ২৭ জুন রওনা করি খুলনার কয়রা উপজেলার কাটকাটা লঞ্চঘাট থেকে। ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি মিনিট বিশেকের মধ্যেই পৌঁছে গেল শাকবাড়িয়া নদীর একটি বাঁকে, যেখান থেকে দক্ষিণে মোড় নিয়ে খড়খড়িয়া খাল দিয়ে ঢুকে পড়া যায় সুন্দরবনে।

দূর থেকেই বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা জলাভূমির জঙ্গল সুন্দরবনকে চিরকালের মতোই সবুজ-সুন্দর-নয়নাভিরাম লাগল। যত এগোই, ততই সবুজ। হঠাৎ নজর আটকাল একটু ব্যতিক্রমে। সবুজের মাঝে কিছুটা ধূসর-বিবর্ণ। যত এগোতে থাকি, বাড়তে থাকে সেটা। মনের মাঝে খটকা। এমন দৃশ্য তো আগে কখনো চোখে পড়েনি! ঠিক এ মৌসুমেই জীবনে বহুবার সুন্দরবনের এই এলাকাসহ অনেক এলাকায়ই আসা-যাওয়া হয়েছে। কোনো দিন এমনটা দেখা যায়নি। সফরসঙ্গীদের মাঝে যাঁরা অভিজ্ঞ, তাঁদেরও একই মত—আগে কখনো দেখা যায়নি এমন দৃশ্য।

ভ্রমণ শেষে কয়রায় ফিরে প্রবীণ-নবীন মিলিয়ে নয়জন জেলে, চারজন বাওয়ালি, সাতজন মৌয়ালকে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরাও একই সুরে বলেন, এই জুন মাসের শেষে এ রকম দৃশ্য আগে কেউ দেখেননি। এমনকি বনরক্ষীদের ছয়জনের কাছে জানতে চাইলে, তাঁরাও একই মন্তব্য করেন।

দৃশ্যটা এ রকম : বিশাল-বিপুল-বিস্তীর্ণ সবুজের মাঝে জায়গায় জায়গায় কিছু অংশজুড়ে একদঙ্গল গাছের পাতা নেই; মরা গাছের কঙ্কালগুলো দাঁড়িয়ে আছে যেন। ভরা বর্ষায় সুন্দরবনে এই চিত্র কেন?

ওই দিন সুন্দরবনে ঘুরতে গিয়ে ঘুরেফিরে এই প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্নজনের কাছ থেকে মিলেছে ভিন্ন ভিন্ন জবাব। সবই বিভ্রান্তিকর। একমাত্র নৌকার মাঝি মিরাজকে জিজ্ঞাসা করলে জবাব মেলে কিছুটা বাস্তবসম্মত। মিরাজ বলেন, ‘ওইগুলান গেওয়াগাছ। ইবার রোগে ধরিছে। আগে কখনো দেখিনি। ইবারই প্রথম।’

...এটা মথ পোকার শূককীট। তবে একটি বিষয় দেখলাম, সুন্দরবনের যেসব এলাকায় পানির লবণাক্ততা বেশি, সেখানে পোকার আক্রমণও বেশি হয়েছে।
মমিনুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট

সুন্দরবন অঞ্চলের নৌকার মাঝির মুখে ‘ইবারই প্রথম’ শব্দযুগল চমকে ওঠার মতো তথ্যের ইঙ্গিতবাহী মনে হলো। মনে পড়ল বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত এক জরিপ-গবেষণা প্রতিবেদনের কথা। সেখানে বলা হয়েছে, ‘সুন্দরবনের প্রায় ৪০ শতাংশ সুন্দরীগাছ আগামরা রোগ এবং ৫০ শতাংশ পশুরগাছ হার্ট রট বা ঢোর রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বনের প্রায় ১০ শতাংশ গেওয়াগাছের শিকড়ে পচন ধরেছে। বয়স্ক কিছু গেওয়াগাছেও আগামরা রোগ দেখা দিয়েছে। অনেক বাইনগাছ হোলিং (গর্ত) রোগে আক্রান্ত। স্থানভেদে ১ থেকে ৫ শতাংশ বাইনগাছেও আগামরা রোগ হচ্ছে। বনের কিছু কিছু গরানগাছে দেখা দিয়েছে ডাল-পচন রোগ। আক্রান্ত গাছগুলো ধীরে ধীরে শুকিয়ে মারা যাচ্ছে।’

আঁতকে ওঠার মতো খবর

বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তা আ স ম হেলাল সিদ্দিকীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুন্দরবন অঞ্চলের নদী-খালের পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরী, পশুর, ধুন্দল, খলিসা, ঝানা, মঠগরান, নুনিয়া, ভাতকাঠির মতো কম লবণসহিষ্ণু বেশ কয়েকটি প্রজাতির গাছ কমে গেছে। আর গেওয়াগাছ বেশি লবণসহিষ্ণু হওয়ায় এই গাছ বেড়ে গেছে।’ তাঁর কাছেই জানা যায়, ১৯৮৫ সালে সুন্দরবনে গেওয়াগাছ ছিল ১৬ শতাংশ এলাকায়। আর ২০২২ সালে গেওয়াগাছের চারা পাওয়া গেছে বনের ৫০ শতাংশে। বর্তমানে সুন্দরবনের ৫৫ শতাংশই গেওয়াগাছ।

বোঝা গেল, জলবায়ু পরিবর্তনের নানা অভিঘাত আর পানি-মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধির প্রভাবে সুন্দরবনের অন্য প্রজাতির গাছগুলো যখন বিপন্ন; তখন অন্যতম এই বিশ্ব-ঐতিহ্যের অস্তিত্ব রক্ষার প্রধান ভরসা ধরা যায় গেওয়াগাছকে। সেই গাছেও সমস্যার কথা তাই হেলাল সিদ্দিকীসহ সব গবেষক-বিশেষজ্ঞের কাছেই আঁতকে ওঠার মতো খবর হয়ে দাঁড়ায়।

* এবার ঝুঁকিতে গেওয়াগাছ; পাতা খেয়ে ফেলছে শুঁয়োপোকার মতো কালো কীট
* যেখানে লবণাক্ততা বেশি, সেখানে পোকার আক্রমণও বেশি
* জলবায়ু পরিবর্তনেরই অভিঘাত ভেবে গবেষণায় নামছেন বিশেষজ্ঞরা

সেদিন আমাদের নৌকা খড়খড়িয়া খাল দিয়ে সুন্দরবনের যতই গভীরে ঢুকতে থাকে, ততই দুপাশে বাড়তে থাকে গেওয়াগাছের বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার দৃশ্য। যেতে যেতে পৌঁছে যাই বন বিভাগের বজবজা টহল ফাঁড়িতে। সেখানে থেমে বিষয়টি উত্থাপন করলে বনরক্ষী মফিজুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন আগে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রিমালের তোড়ে বালু-পলিতে চাপা পড়েছে শ্বাসমূল; তাই গেওয়াগাছগুলো মারা যাচ্ছে। কিন্তু ভিন্নমত পোষণ করলেন বজবজা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এখন গেওয়াগাছের পাতা ঝরার মৌসুম। ওই দেখেন, কিছু গাছের সব পাতা ঝরে গেছে। আবার কিছু গাছের পাতা সবুজ আছে।’

বিভ্রান্ত মনোরথে এবং মেঘ-বৃষ্টির দুর্যোগের মাঝে কোথাও নেমে গেওয়ার সমস্যাটা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ না পেয়ে সেদিনের মতো ফিরতে হলো কয়রায়। প্রথমেই অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেল, গেওয়াগাছের পাতা ঝরা আর নতুন পাতা আসার মৌসুম সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, জুন-জুলাই নয়। বরং এই সময়ে গেওয়াগাছ ফুলে ফুলে ভরে ওঠার কথা।

আসলেই কি প্রথম

কী ঘটছে গেওয়াগাছে? কেন ঘটছে? আসলেই কি প্রথম ঘটছে? প্রশ্নের পর প্রশ্ন মনে ভিড় করায় সপ্তাহখানেক পর ৪ জুলাই আবার অনুসন্ধানে বের হতে হলো সুন্দরবনে।

নৌকায় করে পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের কোবাদক, কালাবগী, বজবজা, আন্ধারমানিক, শাকবাড়িয়া, কাশিয়াবাদ এলাকায় গিয়ে চারদিকে আগামরা অসংখ্য সুন্দরীগাছ দেখা গেল। বেশির ভাগ পশুরগাছে বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। শ্বাসমূলের ওপর বালু-পলি পড়ে কিছু কেওড়াগাছ মারা যাচ্ছে। সেদিন আবার শাকবাড়িয়া, খড়খড়িয়া ও বজবজা নদীর তীরে দেখা গেল—গেওয়াগাছগুলোয় কোনো পাতা নেই, শুধু যেন গাছের কঙ্কাল দাঁড়িয়ে।

বজবজা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের কাছে আবারও জানতে চাইলে এবার তিনি বলেন, ‘আমার টহল ফাঁড়ির আশপাশের সব গেওয়াগাছের পাতা পোকায় খেয়ে ফেলেছে। প্রথমে ভেবেছিলাম ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় জোয়ারের পানিতে বন ডুবে থাকা ও গাছের গোড়ায় পলি জমে থাকায় গাছগুলো মরে যাচ্ছে। পরে দেখি গাছ মরেনি, পাতা পোকায় খেয়ে সাবাড় করেছে। তবে গত কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ায় এখন আর পোকা নেই।’

শাকবাড়িয়া টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামেরও একই অভিজ্ঞতা। তাঁর এলাকায়ও গেওয়াগাছের পাতা পোকায় খেয়ে ফেলেছে। গাছগুলো মনে হচ্ছে মারা গেছে, কিন্তু মরেনি। তাঁর ভাষ্য, জুন-জুলাই মাসে গেওয়াগাছে ফুল ফুটে মৌমাছিদের আনাগোনার কথা। কিন্তু পোকার আক্রমণে এবার আর ফুল, পাতা, কচি ডাল কিছুই নেই।

এ যাত্রায়ও পোকার দেখা মিলল না। পরে ৮ জুলাই আবার হাজির কাটকাটা গ্রামের লঞ্চঘাটে। ‘রিপন ভাইয়ের রেস্টুরেন্ট’-এ বসে চা-চক্রের সময় রিপন ভাই নিজেই বললেন, ‘আমার দোকানের চারপাশে অনেক গেওয়াগাছ ছিল। কয়েক দিন আগে হঠাৎ করে কোত্থেকে শুঁয়োপোকার মতো কালো কালো কীট এসে ভরে গেল। সারা দিন কিলবিল করে গেওয়াগাছের সব পাতা সাবাড় করে, শেষে দলে দলে আমার দোকানে এসে হাজির হয়। ভয়ে আর কাস্টমার আসে না দোকানে। বাধ্য হয়ে আমি সব গাছ কেটে ফেলি।’

সুন্দরবনে মথ বা প্রজাপতির লার্ভা তো আগেও ছিল। কিন্তু আগে তো গেওয়াগাছ এভাবে সাবাড় হয়নি! যে পোকায়ই খাক না কেন, বিষয়টি একেবারেই নতুন ও উদ্বেগজনক।

গৌরাঙ্গ নন্দী, সুন্দরবন গবেষক ও লেখক

আলাপচারিতার ফাঁকে ইমরান হোসেন নামের এক যুবক বলে উঠলেন, তাঁদের এলাকার নদীর চর আর রাস্তার পাশের সব গেওয়াগাছের পাতা পোকায় সাবাড় করেছে। তাঁর কথার সূত্র ধরে কাটকাটা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শাকবাড়িয়া নদীর তীর ধরে কিছুটা সামনে এগোতেই চোখে পড়ে নদীর চর, সড়কের কিনারা আর চিংড়িঘেরের বাঁধ বরাবর পাতাবিহীন গেওয়াগাছের সারি। কাটকাটা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুই দিন আগে এলে দেখতেন পোকার কী যন্ত্রণা! রাস্তায়ও হাজারে হাজারে কালো শুঁয়োপোকার মতো কীট কিলবিল করত। হাঁটাচলা করতে অসুবিধা হতো। আশপাশের বাড়িঘরেও পোকা ঢুকে গিয়েছিল। অনেকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিল।’

কাটকাটা গ্রামের বাসন্তী রানী বলেন, ‘পোকা তাড়াতে দিনরাত ঘরদুয়ার ঝাড়ু দিয়েও লাভ হয়নি। বাচ্চাদের পড়ার টেবিলে, এমনকি রান্না করা খাবারেও পোকা উঠে পড়ত।’

তবে সবাই জানান, কয়েক দিন বৃষ্টির পর পোকাগুলো আর দেখা যায় না।

এই পর্যায়ে অনলাইনে পত্রপত্রিকা ঘাঁটতে গিয়ে চোখে পড়ে ২০১৯ সালের একটি খবর—বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে গেওয়াগাছের পাতা খাওয়া এ ধরনের পোকায় অতিষ্ঠ মানুষজন। গত ১০ জুলাই সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই সময় গাজীপুরের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে একটি দল আসার কথা ছিল। কিন্তু পরে আর পোকার উপদ্রব দেখা না যাওয়ায় তারা আসেনি।

যেন গাছের কঙ্কাল দাঁড়িয়ে আছে

কয়রার বনজীবী জেলে গোবিন্দ মণ্ডল ৯ জুলাই প্রথম আলোকে জানান, গত মাসের ২৪ তারিখে তিনি বনরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কাঁকড়া ধরার জন্য সুন্দরবনের পাতাখালী খালে ঢুকেছিলেন। সেদিন সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু পরের দিন আবার একই জায়গায় গিয়ে দেখেন, খালের পাড়ের একটা গেওয়াগাছেও পাতা নেই; সব পাতা উধাও হয়ে গাছের কঙ্কাল দাঁড়িয়ে আছে। তিনি ভীষণ অবাক হয়ে নৌকা থেকে নেমে বনের মধ্যে ঢুকে দেখেন, শুঁয়োপোকার মতো অসংখ্য পোকা কিলবিল করছে আর গাছের পাতা খাচ্ছে। এই জেলেও বললেন, ‘গেওয়ার পাতা খাওয়া পোকা আগে আমরা কখনো দেখিনি।’

ঘটনা পরম্পরায় বোঝা গেল, এই পোকা লোকালয় থেকে ছড়িয়ে পড়েছে সুন্দরবনেও। ওই দিনই ফের সুন্দরবন ও সংলগ্ন লোকালয়ে ঘুরে পোকায় খাওয়া গেওয়াগাছ দেখলেও কোথাও পোকার উপস্থিতি না পেয়ে মনে হলো, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে হয়তো পোকার উপদ্রব শেষ হয়েছে। কিন্তু সেটি ভুল প্রমাণিত হয় পরদিন সকালে এক বনরক্ষীর ফোন পেয়ে। শাকবাড়িয়া টহল ফাঁড়ির বনরক্ষী আবদুল ওয়াদুদ মুঠোফোনে জানান, তাঁদের ফাঁড়ির উল্টো পাশে শাকবাড়িয়া নদীর তীরে গেওয়াবাগানে পোকায় হানা দিয়ে সব পাতা খেয়ে ফেলছে। দ্রুত সেখানে পৌঁছে এবার দেখা মিলল পোকা–রহস্যের। প্রজাপতির ডিম ফুটে বের হওয়া শুঁয়োপোকার মতো দেখতে; তবে গায়ে কোনো শুঁয়ো নেই। কালো রঙের পোকাগুলো বিপুল উৎসাহে সাবাড় করছে গেওয়াপাতা। এই দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করে নোটসহ সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মমিনুল ইসলামের হোয়াটসঅ্যাপে।

বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে মমিনুল ইসলাম ফিরতি ফোন কলে  বলেন, ‘এটা মথ পোকার লার্ভা মনে হচ্ছে। মথ দেখতে অনেকটা প্রজাপতির মতোই, কিন্তু প্রজাপতি না। এই পোকা যে গাছে ডিম পাড়ে, লার্ভাগুলো সে গাছেরই পাতা খায়। ১০ দিনের মতো গাছের পাতা খায় এরা। মথ সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে মৌমাছির মতো একসাথে থাকে। এ কারণে একই এলাকায় একসাথে সবাই ডিম দেয়।’ এই গবেষক আরও বলেন, ‘তবে এদের গেওয়াগাছের মতো আঠালো বিষযুক্ত গাছের পাতা খাওয়ার বিষয়টা এবারই প্রথম দেখলাম। আমরা সেখানে গিয়ে বিষয়টি দেখব।’

কয়রার বনজীবী জেলে আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘এই গেওয়াগাছের পাতা ও ডালে একধরনের আঠা আছে। সে কারণে হরিণ বা অন্য কোনো প্রাণী এই গাছের চারা বা পাতা খায় না। গেওয়াগাছে পাখিও বাসা বাঁধে কম। অথচ এবার আশ্চর্য হয়ে দেখছি, কালো শুঁয়োপোকার মতো একধরনের পোকা গেওয়াগাছের পাতা, ডাল, ফল সব খেয়ে গাছের কঙ্কাল বের করে দিচ্ছে।’

গেওয়াগাছের এই বৈশিষ্ট্যের কথা নিশ্চিত করেন বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তা আ স ম হেলাল সিদ্দিকী ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী।

ইন্টারনেটে উইকিপিডিয়া ঘেঁটেও দেখা গেল, গেওয়াগাছের পাতা ও কাণ্ডে একধরনের আঠালো বিষাক্ত উপাদান থাকে। সেটা চোখে লাগলে অন্ধত্ব পর্যন্ত ঘটতে পারে। শরীরের ত্বক ও শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিরও ক্ষতি করে। এসব কারণে গেওয়াকে ‘বিষবৃক্ষ’, ‘চোখ কানা করা গাছ’ ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। তবে গেওয়ার এই বিষাক্ত পাতাই আবার এশিয়ার কোনো কোনো জলাভূমির বনাঞ্চলে ‘জুয়েল বাগ’ নামে একধরনের রঙিন পোকার লার্ভার একমাত্র খাদ্য; অন্য কোনো প্রাণীর খাদ্যের কথা বলা নেই।

ঘটনাপ্রবাহ শুনে অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ‘না দেখে, না বুঝে সঠিক করে কিছু তো বলা যাবে না। এই প্রজাতি হয়তো এখন গেওয়াগাছকে তাদের উপযোগী মনে করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে গেওয়াগাছের এই বিবর্ণতা হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য। শুঁয়োপোকা আকারে শূককীটগুলো দুই সপ্তাহের মতো কাটায়।’

বিষয়টি নতুন ও উদ্বেগজনক

এবার প্রশ্ন আসে, এত যুগ পর হঠাৎ কেন গেওয়ার পাতা শুঁয়োপোকা খাওয়া ধরল? তবে কি এটা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উষ্ণতা বৃদ্ধি, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি বা বৃষ্টিপাতে অনিয়ম কিংবা পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত? কেননা আগেই জানা গেছে, সুন্দরবন অঞ্চলের নদী-খালের পানিতে লোনা বেড়ে যাওয়ায় অন্য অনেক গাছের বিপর্যয় ঘটলেও, একমাত্র গেওয়াগাছই বহাল তবিয়তে আছে এবং এই গাছের বিস্তারও ঘটছে বনে। তবে কি লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে গেওয়াগাছের বিস্তার ঘটালেও এর কীট-বালাইপ্রতিরোধী গুণের ক্ষতি ডেকে আনছে?

এই প্রশ্নে অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ‘সেটাও হতে পারে। আসলে সুন্দরবনের গাছের রোগব্যাধি আর পোকার আক্রমণের কারণ, অবস্থা ও প্রতিকারের উপায় নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।’

একই প্রশ্নে আরেক সুন্দরবন গবেষক ও লেখক গৌরাঙ্গ নন্দী বলেন, ‘সুন্দরবনের গেওয়াগাছের পাতার ওপর একধরনের মোমের মতো প্রলেপ আছে। এর ডাল কিংবা পাতা ভাঙলে দুধের মতো সাদা আঠালো রস বের হয়। গায়ে বা চোখে পড়লে ভীষণ কষ্ট হয়। অনেক সময় ঘা হয়ে যায়। এই গাছে পোকার আক্রমণ তাই বেশ ভাবনার বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনে মথ বা প্রজাপতির লার্ভা তো আগেও ছিল। কিন্তু আগে তো গেওয়াগাছ এভাবে সাবাড় হয়নি! যে পোকায়ই খাক না কেন, বিষয়টি একেবারেই নতুন ও উদ্বেগজনক।’

গেওয়াগাছে পোকার আক্রমণ আগেও ছিল। হয়তো এবার যে এলাকায় আক্রমণ দেখা গেছে, সেখানে প্রথম। বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে পোকাও চলে যায়। আবার নতুন পাতা জন্মাবে। আর এই পোকা খাওয়ার জন্য সুন্দরবনে প্রচুর ছোট ছোট পাখি আছে। তাই এটা নিয়ে আমরা বিচলিত নই।

মিহির কুমার দে, খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক

বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের ম্যানগ্রোভ সিলভিকালচার বিভাগের কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, ‘গেওয়াগাছে পোকার আক্রমণের খবর শুনে এটা আমাদের কাছে নতুন উপদ্রব মনে হচ্ছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সুন্দরবনে গিয়ে দেখেশুনে করণীয় ঠিক করব।’

বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সুন্দরবনকে লবণাক্ত কম, মাঝারি ও বেশি—এই তিন এলাকায় ভাগ করে দেখা গেছে, মাঝারি ও বেশি লবণাক্ত এলাকায় গাছের চারা গজানোর হার কমে গেছে। লবণাক্ততা, ছত্রাকসহ আরও কিছু বিষয়ের সমন্বিত প্রভাবেই সুন্দরবনে বাড়ছে বিভিন্ন গাছের রোগ। রোগের কারণ বিশ্লেষণে আমাদের গবেষণা চলছে। তবে গেওয়াগাছে পোকার আক্রমণের বিষয়টি আমাদের ভাবাচ্ছে।’

লবণাক্ততা বেশি, পোকার আক্রমণও বেশি

বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তা আ স ম হেলাল সিদ্দিকী বলেন, অধিক লবণাক্ত এলাকায় বয়স্ক সুন্দরীগাছ বেশি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অধিক ও মৃদু লবণাক্ত উভয় এলাকায়ই পশুরগাছ ঢোর রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢোর রোগে আক্রান্ত গাছের বাকল ঠিক থাকে, তবে ভেতরের কাঠ পচে যায়। তবে বনের গেওয়াগাছে পোকার আক্রমণের বিষয়টি বেশ উদ্বেগের।

কিন্তু উদ্বিগ্ন হতে নারাজ খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে তিনি বলেন, ‘গেওয়াগাছে পোকার আক্রমণ আগেও ছিল। হয়তো এবার যে এলাকায় আক্রমণ দেখা গেছে, সেখানে প্রথম। বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে পোকাও চলে যায়। আবার নতুন পাতা জন্মাবে। আর এই পোকা খাওয়ার জন্য সুন্দরবনে প্রচুর ছোট ছোট পাখি আছে। তাই এটা নিয়ে আমরা বিচলিত নই। তবে জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট। এর সঙ্গে সুন্দরবনে মিঠা পানির প্রবাহ কম। বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনের গাছপালা রোগাক্রান্ত হচ্ছে। কিছু গাছ মারা যাচ্ছে, আবার প্রতিনিয়ত নতুন চারা গজাচ্ছে।’

শাকবাড়িয়া নদীর তীরে গেওয়াবাগানে পোকায় হানা দিয়ে সব পাতা খেয়ে ফেলছে। …প্রজাপতির ডিম ফুটে বের হওয়া শুঁয়োপোকার মতো দেখতে; তবে গায়ে কোনো শুঁয়ো নেই। কালো রঙের পোকাগুলো বিপুল উৎসাহে সাবাড় করছে গেওয়াপাতা।

সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ-নদী-খালের লবণাক্ততা নিয়ে গবেষণা করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন (বিভাগ)। এর প্রধান অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরীর কাছ থেকে জানা যায়, ২০১২ সালে বনের বিভিন্ন নদী ও খালের পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৩ থেকে ১৮ দশমিক ৮ পিপিটি। মাত্র এক দশকের ব্যবধানে ২০২২ সালে তা বেড়ে ১২ দশমিক ৮ থেকে ২৪ দশমিক ৫ পিপিটি পাওয়া গেছে। আর মাটিতে ৬ দশমিক ৯ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ পিপিটি লবণাক্ততা।

গত ২৮ জুলাইও সুন্দরবনের ফুলতলা ও ছাচানাংলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সব গাছে সবুজ পাতা থাকলেও কোনো গেওয়াগাছে পাতা নেই। সঙ্গে থাকা বনকর্মী মনিরুল ইসলাম বলেন, এবার সুন্দরবনে গেওয়াগাছের চারা কম হবে। কারণ, এই সময় গেওয়াগাছে ফুল হয়। আর আগস্ট মাসের দিকে ফুল থেকে ফল হয়ে পাকে। সেই ফল ঝরে পড়ে নদীর স্রোতে বনের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে বীজ ছড়িয়ে গেওয়াবন সৃষ্টি হয়। যেহেতু এবার পোকার আক্রমণের কারণে ফুল, ফল কিছুই নেই, তাই গেওয়াগাছ কম জন্মাবে সুন্দরবনে।

সর্বশেষ গত ১০ সেপ্টেম্বর আবারও সুন্দরবনে ঢুকে দেখা যায়, গেওয়াগাছগুলোয় কচি পাতার হাতছানি। নৌকার মাঝি রিপন হোসেন বলেন, ‘বনের নদী-খালে সুন্দরী, গরান, বাইনগাছের ফল ভাসলেও এবার গেওয়ার ফল ভাসতে দেখলাম না। ফল না হলে চারা হবে কেমনে?’

ফিরে এসে ওই দিনই বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা মমিনুল ইসলামের সঙ্গে আবার কথা হয়। তিনি বললেন, ‘এবার সুন্দরবনের অধিকাংশ এলাকায় গেওয়াগাছে পোকার আক্রমণ ঘটেছে। আমরা আপনার কাছ থেকে বিষয়টি জেনে নিজেরা সুন্দরবনে গিয়ে দেখেছি, এটা মথ পোকার শূককীট। তবে একটি বিষয় দেখলাম, সুন্দরবনের যেসব এলাকায় পানির লবণাক্ততা বেশি, সেখানে পোকার আক্রমণও বেশি হয়েছে।’

Post Views: 66
Tags: lid

Like us

সম্পাদক ও প্রকাশক:

এম কামরুজ্জামান

ইমেইল: voiceofsatkhira@gmail.com

মোবাইল: ০১৭৪০৫৬৮০২০

© 2023 Development By Fahad Hossain

No Result
View All Result
  • জাতীয়
  • সাতক্ষীরা সদর
  • কলারোয়া
  • তালা
  • দেবহাটা
  • কালীগঞ্জ
  • আশাশুনি
  • শ্যামনগর
  • তথ্যপ্রযুক্তি
  • খেলা
  • স্বাস্থ্য
  • সুন্দরবন

© 2023 Development By Fahad Hossain

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist