বি. এম. জুলফিকার রায়হান ::
২০২০ সালে এডিট করা একটি অডিও রেকর্ডকে কেন্দ্র করে আবারও তালা উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক অজয় কুমার ঘোষ এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং তাকে হয়রানীর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ নাম সর্বস্ব গণমাধ্যমে অপপ্রচার শুরু করায় সংশ্লিষ্টদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এরআগে অজয় কুমার ঘোষ সহ কয়েকজন বরেন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জড়িয়ে এডিট করা ওই অডিও কল রেকর্ডিং ব্যপক ভাবে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় সাধারন জনতা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়ে তালা উপশহরে মানববন্ধন সহ দোষীদের শাস্তির দাবীতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক’র নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন।
তালার ঘোষনগর গ্রামের বরেন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অমল কান্তি ঘোষ’র ছেলে, তালা উপজেলা সমবায় কার্যলয়ের সহকারি পরিদর্শক অজয় কুমার ঘোষ বলেন, ২০২০ সালে তালা উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইকালে একটি মহল ঘুষ বানিজ্য করে অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানানো আবার স্বার্থ উদ্ধার না হওয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়ার পায়তারা চালাতে থাকে। এসময় মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার সুভাষ সরকার, তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. মফিজ উদ্দীন, ডেপুটি কমান্ডার আলাউদ্দীন জোয়াদ্দার ও আমার পিতা অমল কান্তি ঘোষসহ অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানান। একজন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান হিসেবে আমিও স্বচ্ছতার সাথে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরির পক্ষে স্বোচ্ছার ছিলাম। এতে স্বার্থান্বেসী এবং দূর্নীতি পরায়ন ওই মহল আমার বিরুদ্ধে সহ স্বচ্ছভাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরির পক্ষের মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র শুরু করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারন জনতা দূর্নীতিবাজদের শাস্তির দাবীতে সেসময়ে তালায় মানববন্ধন সহ জেলা প্রশাসক’র নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান অজয় কুমার ঘোষ বলেন, দীর্ঘদিন ঘাপটি মেরে থাকার পর ওই মহলটি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং আমাকে সহ আমার বীর মুক্তিযোদ্ধা পিতার সম্মানহানী করতে নানান ভাবে মিথ্যা ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। এমনকি চাঁদার দাবীতে আমাকে হুমকি প্রদান সহ নানাভাবে হয়রানীর চেষ্টা করছে। ওই মহলটি পরিকল্পিতভাবে ২০২০ সালে তৈরি করা একটি অডিও কল রেকর্ড আবারও প্রচার চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। কিন্তু চাঁদার টাকা না দেয়ায় আমার বিরুদ্ধে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনগড়া, মিথ্যা ও কাল্পনিক তথ্য প্রচার করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তালা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক এক নেতা বলেন, বিগত সরকার বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নতুন করে প্রণয়ন শুরু করলে আমরা স্বচ্ছতার সাথে তালিকা প্রণয়নে কাজ করি। এরমধ্যে ২০২০ সালে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও সমবায় অফিসের পরিদর্শক অজয় কুমার’র একটি অডিও রেকডিং ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে খোজ নিয়ে আমরা বুঝতে পারি- ওই অডিও রেকর্ডিংটা পরিকল্পিত ভাবে এডিট করা। এছাড়া অডিওতে অজয় ঘোষ এবং সুমন সাহার যে কথপোকথন রয়েছে তা হাস্যকর। কারন, অডিও রেকর্ডিং এর আলোচ্য লোলিত মোহন এর মুক্তিযোদ্ধা জাল সনদটি তৈরি হয় ২০০৩ সালে এবং ওই সনদ দিয়ে তাঁর ২ ছেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২০০৫ সালে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করে। যেহেতু আগেই লোলিত মোহন এর ২ ছেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করছে সেহেতু ২০২০ সালে নতুন করে সার্টিফিকেট তৈরীর চেষ্টা হাস্যকর।
এব্যপারে সংশ্লিষ্ট লোলিত মোহন সাহার পুত্র প্রতাপ কুমার সাহা জানান, ২০০৩ সালের একটি সাটিফিকেট তৎকালীন ধানদিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তবিবুর রহমান আমাদের দিয়ে মোটা অংকের টাকা নেয়। পরবর্তীতে উক্ত সাটিফিকেটের মাধ্যমে আমাদের ২ ভায়ের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি হলে তবিবুর রহমান আবারও টাকা দাবী করলে তাঁর সাথে আমাদের বিরোধ হয়। এরইমধ্যে আমরা জানতে পারি- আমার পিতার নামের উক্ত মুক্তিযোদ্ধা সাটিফিকেট জাল। এনিয়ে মুক্তিযোদ্ধা তবিবুর রহমান’র সাথে বিরোধ হলে ২০১৮ সালে তিনি বিজ্ঞ আদালতে জাল সনদের মামলা করে। এসময় আমরা চাকরি হারানোর ভয়ে তবিবুর রহমানকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা দিলে তিনি নোটারী পাবলেিকর মাধ্যমে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। এরইমধ্যে জাল সনদের বিষয়টি নিয়ে ব্যপক জানাজানি হলে আমারা ২ ভাই চাকরি থেকে বরখাস্ত হই। এঅবস্থায় আমরা মুক্তিযোদ্ধা তবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়া শুরু করলে তিনি আমাদের বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করে। পরবর্তীতে তিনি ও তার পক্ষের কতিপয় ব্যক্তি আমার ভাইপো সুমন সাহা ও তার কাছের বন্ধু তালার অজয় ঘোষ বাবলুর একটি অডিও কল রেকডিং এডিট করে ছড়িয়ে দেয়।
প্রতাপ কুমার সাহা বলেন, ২০০৩ সালে অজয় বাবুর সাথে আমাদের কোন পরিচয় ছিলোনা। তিনি জাল সাটিফিকেটের বিষয়টি একবিন্দুও জানেন না এবং তাঁর সাথে আমাদের কোন লেনদেন কোনদিন হয়নি। অজয় ঘোষ’র সাথে আমাদের পরিচয় হয় ২০২০ সালে আমার ভাইপো সুমনের মাধ্যমে।
এবিষয়ে তালা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মৃনাল কান্তি রায় জানান, অজয় ঘোষ একজন ভদ্র ছেলে এবং তার বীর মুক্তিযোদ্ধা পিতাকে আমরা দলমত নির্বিশেষে সম্মান করি। অজয় কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী নয়; একজন সরকারী কর্মচারী। তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করা দুঃখজনক।
এদিকে, অডিও কল এডিটিং করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ায় তালা থানায় জিডি করা হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইসিটির আইনে মামলা করা হবে বলে অজয় ঘোষ জানান।
###