এস,কে হাসান ::
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আর এই উৎসবকে ঘিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আশাশুনির শিল্পীরা।
আগামী ১৪ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যদিয়ে দেবী দুর্গার আগমনের বার্তা মর্তলোকে পৌঁছে যাবে। মাতৃবন্দনা শুরু হবে ২০ অক্টোম্বর, শুক্রবার। মহাপঞ্চমী তিথিতে দেবীর বোধনের মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসব। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছে আশাশুনির প্রতিমা শিল্পীরা। পড়েছে প্রতিমা সাজানোর ধুম। প্রতিবারের ন্যায় এবারও আশাশুনিতে ১০৮টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পরম যত্নে পূজা মন্ডপে প্রতিমা ও মন্ডপ সাজানো হচ্ছে।
বিশেষ করে আশাশুনির বুধহাটা কাছারিপাড়া পূজা মন্ডপ, আশাশুনি সদর পুজা মন্ডপ, বুধহাটা সুবর্ণ বনিকপাড়া পূজা মন্ডপ, মহেশ্বরকাটি পূজা মন্দির, কাদাকাটি পূর্ব কাদাকাটি, টেংরাখালী,ঝিকরা তেতুলিয়া কচুয়া মহিষাডাঙ্গা, আরার,গাবতোলাসহ আশাশুনির ১০৮টা পূজা মন্দিরে চলছে প্রতিমা তৈরি, মন্দির সাজানোসহ অন্য অন্য কাজ। ১১টি ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় পূজা র আমেজে মেতে উঠেছে সনাতন ধর্মালম্বীরা। দোকানী রা সাজিয়েছে নিত্য নতুন কাপড়সহ পোষাক দিয়ে। প্রতিমা তৈরির কারিগরদের বেড়েছে ব্যস্ততা। হাত সময় নেই, তাই অনেক কারিগর রাত দিন কাজ করছেন। তাদের দম ফেলার সময় নেই। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করেও সঠিক পারিশ্রমিক না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করেন প্রতিমা কারিগররা। আশাশুনির বেশ কয়েকটি প্রতিমা তৈরীর মন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, পূজা আরম্ভের দিন সন্নিকটে হওয়ায় প্রতিমা মন্ডপে তোলার উপযোগী করে তুলতে দিনরাত কাজ করছেন শিল্পীররা।
বুধহাটা সুবর্ণ বনিকপাড়া পূজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরী করছেন অরবিন্দু দাশ। তিনি গত ২০বছর এ এলাকায় প্রতিমা তৈরী করছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিবারের ন্যায় এবার তিনজন কর্মচারী বার সেট প্রতিমা তৈরী করছি। রোদ কম হওয়ায় গ্যাসের হ্যান্ড চুলায় প্রতিমা শুকাতে হচ্ছে। পূজার শেষ সময় এসে গেছে।
এ ব্যাপারে কাদাকাটি দক্ষিণ কালিবাড়ি পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুকুমার বৈরাগী বলেন, আমরা বহুদিন থেকেই দুর্গা উৎসব করে আসছি প্রতি বছরের ন্যায়ও সুন্দর সুষ্ঠুভাবেপূজা উদযাপন করবো বলে আশা করছি,। সরকারি সমস্ত সহযোগিতা আমরা পাবো বলে আশা করছি । সকল রকম প্রস্তুতি শেষ হওয়ার পথে।
আশাশুনির মহেশ্বরকাটি পূজামন্ডপের শিল্পী বলেন, ‘প্রতিমার রং লাগানোর পাশাপাশি কাপড় পরাতে হবে। বিভিন্ন রংয়ের কাপড় থেকে বেছে নির্দিষ্ট রংয়ের কাপড় পড়িয়ে ট্রায়েল দিতে হবে। কোন কোন প্রতিমায় চার পাঁচ বার করে কাপড় বদলাতে হচ্ছে।’
বুধহাটা কাছারিবাড়ি পূজা মন্ডপের সাধারণ সম্পাদক বাপী দেবনাথ বলেন, ‘আমরা কাছারী পূজা মন্দিরে গুজরাটের লক্ষ্মী ভিলা’র আদলে পান্ডেল তৈরী করবো। বুধহাটা সুবর্ণ বনিকপাড়ার পূজা মন্দিরের কোষাধ্যক্ষ অজয় পাইন বলেন, আমরা কেদার নাথ আদলে প্যান্ডেল করবো।
পূজা উদযাপন পরিষদ আশাশুনি উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক রনজিৎ কুমার বৈদ্য বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে আশাশুনিতে ১০৫টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সবগুলো মন্ডপ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারে সেজন্য উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। আমাদের নিজস্ব মন্দির তদারকি দল থাকবে।
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিশ্বজিৎ কুমার জানান, সকল মন্দিরে যেন উৎসবমূখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করতে পারে সেজন্য আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে। প্রত্যেকটি মন্দিরে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা রাখা হবে। যেহেতু সবগুলো মন্দিরে সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকবে, সেহেতু যদি কোন দুষ্কৃতিকারী চক্র কোন কিছু করার চেষ্টাও করে সেক্ষেত্রে কেউ কোন মাফ পাবেনা। তবে আমি আশা করি, কোন রকমের কোন ঝামেলা ছাড়াই হিন্দু ধর্মাবলম্বী যারা আছেন, তারা নির্বিঘে পূজা উদযাপন করতে পারবেন। পূজা উপলক্ষে থানা পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি আছে।