নাজমুল আলম মুন্না ::
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ঝাউডাঙ্গা ইউপি চেয়াম্যান আজমল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১ টার দিকে তাকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।গ্রেপ্তারকৃত আজমল উদ্দিনের (৫৮) বাবার নাম জামালউদ্দিন। তিনি একই গ্রামের একোব্বর মোড়লের ছেলে ইসলাম মোড়লকে ২০১৪ সালের ১৩ জুন রাতে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার সন্ধিগ্ধ আসামী। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক ফিরোজ হোসেন বলেন ২০১৪ সালের ১৩ জুন সদর উপজেলার ইসলাম মোড়ল হত্যা মামলায় সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে ঝাউডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আজমল উদ্দিনকে বুধবার দুপুরে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে বুধবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের একব্বর মোড়লের ছেলে ইসলাম মোড়ল (৫৮) একজন মাছ ব্যবসায়ী। বিচার শালিসে তার এলাকায় প্রচুর সুনাম ছিল। এ সুনাম সহ্য করতে পারতো না স্থানীয় একটি মহল। এরই ধারাবাহিকতায় ৭ থেকে ৩৫ নং আসামীরা ২০১৪ সালের ১০ জুন সন্ধ্যা ৬টার দিকে তালা- কলারোয়া-১ আসনের সাবেক সাংসদ ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের বাড়িতে এক জরুরী বৈঠক করে। বৈঠকে ইসলাম মোড়লকে হত্যার সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করা হয়। পুলিশসহ সকল আসামীরা ২০১৪ সালের ১২ জুন দিবাগত রাত একটার দিকে বাদির বাড়ি ঘিরে ফেলে। ডাকাডাকির একপর্যায়ে ইসলাম মোড়ল ঘরের বাইরে এলে কয়েকজন আসামী তাকে জাপটে ধরে উঠানে নামায়। কয়েকজন আসামী তাকে মারপিট করে পুলিশ পিকআপে তুলে দেয়। পরে কয়েকজন আসামী পুলিশ পিকআপে উঠে ইসলামের চোখ বেঁধে ফেলে। পুলিশ ভ্যানটি সাতক্ষীরার দিকে চলতে থাকলে বাদিসহ চারজন সাক্ষী দুটি মটর সাইকেলে করে পুলিশ পিকআপের পিছনে পিছনে যেতে থাকে। মাধবকাটি পৌঁছানোর পর পুলিশ বাদিসহ চারজনকে সামনে যেতে মানা করে। মাধবকাটি থেকে সাতক্ষীরার দিকে আনুমানিক ৩শ হাত যাওয়ার পর ছয়ঘরিয়া তিন রাস্তার মোড়ে পুলিশ পিকআপটি থেমে যায়। সেখানে দুটি গুলির শব্দ শুনতে পান বাদি ও কয়েকজন সাক্ষী। বাদি পরে সেখানে যেয়ে রাস্তার উপর তাজা রক্তের ছাপ দেখতে পান।ইসলামের লাশ পুলিশ পিকআপে তুলে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন সকালে বাদিসহ অনেকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে এসে ইমলাম মোড়লের লাশ দেখতে পায়। ইসলাম মোড়লের বুকে দুটি গুলির ক্ষত ছিলো। সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে ইসলাম মোড়লের লাশ গ্রাম পুলিশ কামরুল দফাদারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতেই স্থানীয় মসজিদের সামনে নামাজে জানাযা শেষে ইসলামের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পুলিশের ভয়ে তখন মামলা করা সম্ভব না হলেও বর্তমানে পরিস্থিতি অনুকুলে থাকায় মামলা করা হলো। ২০১৪ সালের ১৩ জুন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের পাথরঘাাটা গ্রামের ইসলাম মোড়লকে বাড়ি থেকে তুলে এনে গুলি করে হত্যার অভিযোগে তার ভাই ইসরাফিল মোড়ল বাদি হয়ে সাতক্ষীরার তৎকালিন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সদর সার্কেলের তৎকালিন সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক, পুলিশ পরিদর্শক নাসিরউদ্দিন, তালা- কলারোয়া-১ আসনের সাবেক সাংসদ ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, জজ কোর্টের সাবেক পিপি এড. আব্দুল লতিফ, সাবেক অতিরিক্ত পিপি এড. ওকালত আলী, কলারোয়া উপজেলা যুবলীগের তৎকালিন সভাপতি কাজী শাহাজাদা, সাতক্ষীরা পৌর কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন কালুসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০ জনকে আসামী করে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা আমলী-১ আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিচারক নয়ন বড়াল মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ি মামলাটি ২৫ সেপ্টেম্বর থানায় রেকর্ড করা হয়। হত্যা মামলায় আজমলকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে সাতক্ষীরা থানার ওসি সামিনুল হক বলেন আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে।