শেখ মাহবুব আহমেদ ::
ঋতুরাজ বসন্তের সাথে সাথে পত্রপল্লব ভেদ করে গাছে গাছে উঁকি দিচ্ছে আমের মুকুল। হলুদে সবুজে মিশে একাকার বর্ণিল সাজে সেজেছে প্রকৃতি। আমের রাজ্য সাতক্ষীরা অঞ্চলের প্রতিটা এলাকায় গাছগুলো এখন আমের মুকুলে ভরেগেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় গত বছরের তুলনায় এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে। পাশাপাশি সাতক্ষীরায় ৯০০ থেকে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন গ্রামিন অর্থনীতি চাঙ্গা হবে সেই সাথে ইউরোপ-আমেরিকারসহ বর্হিবিশ্বে সাতক্ষীরার সুস্বাদু হিমসাগর, গোবিন্দভোগ, লেংড়া ও আ¤্রপালিসহ মোট ২০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হবে। এতে একদিকে যেমন আমের রপ্তানি বৃদ্বি পাবে তেমনি বৈদিশমুদ্রা অর্জন করবে সরকার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরা জেলায় ১৩০০ নিবন্ধিত আম চাষি কৃষক আছে। আম্রপালি, রূপালি, গোলাপখাস, নিলমবরি, তোতাবরি, কালাপাহাড়, কাঁচামিঠা, সিন্দুরগুটি, হিমসাগর, গোবিন্দভোগ, লেংড়া ও হিমসাগর, ফজলি, কালাপাহাড়, খিরসরাইসহ প্রায় ৩০ থেকে ৪০ প্রজাতির আম উৎপাদন হয়ে থাকে। এ বছর ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। যা গত বারের তুলনায় বেশি। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে ৬০ হাজার মেট্রিক টন। আর এর মধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন বাজারে রপ্তানি হবে ২০০ মেট্রিক টন আম। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় গত বছরের তুলনায় সাতক্ষীরায় এবার নয়শত থেকে হাজার কোটি টাকা আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আমচাষিরাও বেশ হাঁসিখুশির মধ্যে রয়েছে।
সাতক্ষীরার দেবহাটা, কালিগঞ্জ, শ্যামনগর, তালা, পাটকেলঘাটা, কলারোয়া, আশাশুনি ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার যেদিকেই চোখ যাবে বিভিন্ন অঞ্চচেলর বাগানগুলোতে প্রতিটি থুকায় থুকায় ফুটে আছে আমের মুকুল। বাড়ীর আঙ্গীনা থেকে শুরু করে প্রতিটি আম বাগানে ও রাস্তার দুই ধারে লাগানো গাছে আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে পুরো এলাকায় সৌরভ ছড়াচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার গাছে গাছে প্রচুর পরিমানে আমের মুকুল দেখে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। তাই বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পারকরছেন কৃষকরা। প্রতিবারের ন্যয় বিদেশে রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
সাতক্ষীরার কৃষিবাড়ির পরিচালক তরুন উদ্যোক্তা কৃষিবিদ রাহাত রাজা জানান, এবছ তিনি আড়াই বিঘা জমিতে আমের বাগান লিজ নীয়ে গাছে মুকুল আসার পূর্ব থেকে পরিচর্যা করে আসছেন। তার বাগানে গত বছরের তুলনায় বেশি আমের মুকুল এসেছে। আশা করছে গত বছরের তুলনায় তিনি ফলনও বেশি পাবেন এবং লাভবান হতে পারবেন। তিনি আরও জানান গত বছর বৈরি আবহাওয়া এবং ব্যাগটেরিয়ারজনিত কারনে আমের মুকুল থেকে গুটি ঝড়ে যাওয়ায় আশানুরূপ ফলন থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। যে কারনে তিনি তেমন একটা লাভের মূখ দেখতে পারেননি। তবে এবার তার বাগানে যদি কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা ঝড় ঝাপটা না হয় সে ক্ষেত্রে তিনি খরচ খরচা বাদ দিয়ে লাখ দেড়েক টাকা লাভবান হতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কৃষি অফিসার মা: মনির হোসেন জানান,এ বছর আম্রপালি,হিমসাগর, গোবিন্দভোগ, লেংড়া ও হিমসাগরসহ মোট ২০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানির কথা ভাবছেন কৃষি বিভাগ। তাই রাষাইনিক ও বিষমুক্ত আম তৈরী করতে ও পোকার আক্রমন রোধে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসের এই শেষ দিকে বৃষ্টির কারনে মাটিতে রস থাকায় গাছে আমের গুটি দাঁড়াতে বেশি সহায়ক হয়েছে। ফলে উৎপাদনে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।