## পুলিশ ও সাধারন মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে
## বিএনপি এবং সাধারন মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
## সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব এবং উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে পরিস্থি শান্ত হয়
ডেস্ক রিপোর্ট ::
ডাকাতি, বিস্ফোরক ও অস্ত্র সহ বিভিন্ন মামলার আসামী সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জেয়ালা গ্রামের রিয়াজুল ইসলামকে গ্রেফতার করে তালা থানা পুলিশ। এঘটনার খবর পেয়ে রোববার রাত ৮টা থেকে গভীর রাত (রাত সাড়ে ১২টা) পর্যন্ত থানা ঘেরাও করে তাকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে তালা উপজেলা বিএনপি, যুবদলের শতাধিক মানুষ। দীর্ঘক্ষন থানা অবরুদ্ধ থাকায় পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে থানার নিরাপত্তার গেটগুলো বন্ধ করে দেয়। ডাকাত সর্দার রিয়াজুলকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেবার মহড়া এবং বিএনপির কতিপয় নেতাদের উস্কানিমূলক বক্তব্য, স্লোগানে থানা এলাকায় উত্ত্বেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে, থানা হাযতে আটক থাকাকালে রিয়াজুল ইসলাম যুবদল নেতা ফারুক হোসেন ও তালা থানা ছাত্রদল সভাপতি হাফিজুর রহমানকে হুমকি দিতে থাকলে জনমনে উদ্বেগ ও আতংক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেফতার হওয়া রিয়াজুল ইসলাম উপজেলার জেয়ালা নলতা গ্রামের মৃত বাসতুল্য মোড়লের ছেলে এবং তালা সদর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিস্কার নেতা।
উপজেলার জেয়ালা গ্রামের একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রিয়াজুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মলম পার্টি তৈরি সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা ও খুলনার বিভিন্ন আদালতে চলমান রয়েছে। মামলায় একাধিকবার পুলিশ ও র্যাবের হাতে সে আটক হয়। ২০১৩ সালের দিকে রিয়াজুল ইসলাম তালা সদর ইউনিয়নের জেয়ালা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন এবং সেই সময়ে নিজ গ্রামে ডাকাতি করার অভিযোগে তিনি গ্রেফতার হন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ’র পতনের দিনে সাতক্ষীরার জেল ভেঙ্গে পালিয়ে এলাকায় ফিরে রাতেই স্বদেশ ঘোষ, তুষার কান্তি ঘোষ, পঞ্চানন ঘোঘের দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করে রিয়াজুল ইসলাম। এসময় সংখ্যালঘুদের দোকান থেকে শত শত বস্তা গো-খাদ্য, মাছের ফিড, ওষধ, কেরোসিন, ব্যারেল ব্যারেল ডিজেল ও তেল লুটপাট করে। এরপর থেকে বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীদের ভয় দেখিয়ে নিয়মিত টাকা চাঁদাবাজী করছিল।
নানাবিধ অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার (০৯ মার্চ) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তালার শেখের হাট বাজার থেকে রিয়াজুল মোড়লকে পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। রাত ৯ টার দিকে তালা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায় সাইদুর রহমান ও মোড়ল আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে শতাধিক লোক থানা ঘেরাও করে রিয়াজুল ইসলামকে ছাড়িয়ে নেবার দফায় দফায় মহড়া চালানো হয়। এসময় রিয়াজুলকে গ্রেফতার করায় পুলিশ, দলীয় প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতা-কর্মী এবং জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য সহ স্লোগান দিতে দিলে পুলিশ সহ সাধারন মানুষ আতংকিত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ও তালা-কলারোয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব’র নির্দেশনামতে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (তালা সার্কেল) হাসানুর রহমান এবং বিএনপি নেতা এম. মফিদুল হক লিটু থানায় পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন।
এবিষয়ে তালা থানার ওসি শেখ শাহিনুর রহমান বলেন, রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ থাকায় পুলিশের একটি টিম তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। তাকে ছাড়াতে উপজেলা বিএনপি নেতা সার্জেন্ট রহিম ও যুবদল নেতা সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে রাত ৯ টার দিকে শতাধিক দুষ্কৃতিকারী থানার চারিদিকে ঘিরে রেখে থানা ও পুলিশ প্রশাসনকে অবরুদ্ধ করে। আইনের সকল নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে থানায় জোরপূর্বক ঢুকে আসামীর ভিডিও স্বাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করি এবং আসামি রিয়াজুল কে সার্কেল স্যারের উপস্থিতিতে রাতেই সাতক্ষীরা ডিবি কার্যালয়ে স্থানন্তর করা হয়।
এদিকে, বহু অপকর্মের সাথে জড়িত রিয়াজুল ইসলামকে থানা থেকে বিএনপি পরিচয়ে জোর করে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টার ঘটনায় তালায় বিএনপির নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারন মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এব্যপারে জানতে চাইলে চাইলে তালা উপজেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সভাপতি মৃনাল কান্তি রায় জানান, রিয়াজুল ইসলাম দল থেকে বহিস্কৃত। রোববার রাতে থানায় যেটা ঘটেছে সেটা বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত ছিলনা। সেটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং দুঃখজনক ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে তারা এর দ্বায় বহন করবে।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু বলেন, বিষয়টি শুনেছি তবে এবিষয়ে এখনও কোনও অভিযোগ পাইনি। তিনি বলেন, আমাদের ম্যাসেজ পরিস্কার। দলের মধ্যে থেকে কেউ দলের ভাবমুর্তী ক্ষুন্ন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
###