বি. এম. জুলফিকার রায়হান ::
তালা শহীদ আলী আহম্মদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের আলোচিত শিক্ষক মো. গওছল কবির’র বিরুদ্ধে ফের তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ভুক্তভোগী অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া শারমীন ঘটনার তদন্তে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরাফাত হোসেনকে প্রধান করে এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও তালা থানার নারী-শিশু ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সদস্য করে ৩সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছেন। গঠিত কমিটির আহবায়ক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আরাফাত হোসেন’র দপ্তরে সোমবার (৬ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভিকটিম শিশু শিক্ষার্থী, অভিযোগকারী এবং অন্যান্য ক্ষুব্ধ অভিভাবক সহ অভিযুক্ত শিক্ষকের স্বাক্ষ গ্রহন ও তদন্ত সম্পন্ন হয়। অভিভাবকরা শিশু শিক্ষর্থীদের যৌন হয়রানী, অনৈতিক প্রস্তাব প্রদান, প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা; না পড়লে পরীক্ষায় মার্ক কম দেওয়া সহ একাধিক বিষয়ে অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার’র নিকট শিক্ষক গওছল কবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। এদিকে, এই তদন্তের আগে অভিভাবকদের আশংকাজনক আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া শারমীনের নির্দেশে ৬ নভেম্বর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক গওছলকে সাময়িকভাবে বিদ্যালয়ের পাঠদান থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও অভিভাবক এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের ক্ষোভ প্রশমন হচ্ছেনা। ক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা অবিলম্বে বিতর্কীত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন সহ ফৌজদারী শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
একাধিক অভিভাবক এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, তালা শহীদ আলী আহম্মদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক গওছল কবির অত্র বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে ক্লাসে যেনতেন পাঠ দিয়ে তিনি প্রাইেভট পড়ার জন্য চাঁপ প্রয়োগ করেন। প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় নাম্বার কম দেবার হুমকি দেন। তাঁর কাছে প্রাইভেট না পড়ায় ইতোপূর্বে একাধিক মেধাবী ছাত্রীকে ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষায় কম নাম্বার দিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক তার মেয়ের উক্তিতে বলেন, “বাবা গার্লস স্কুলে স্যার না হয়ে সব ম্যাম হয়না কেন ? স্যার আমাদের বাজে বাজে কথা বলে, শরীরে হাত দেয়, আমি আর ঐ স্কুলে যাবো না” এমনভাবেই মা-বাবার কাছে কিশোরী (৮ম শ্রেণীর) শিক্ষার্থীর বর্ণনা শুনে হতভম্ব অভিভাবক।
এছাড়া নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ণ করার সময় “যারা তার কাছে প্রাইভেট পড়েনা, তারা মেধাবী শিক্ষার্থী হলেও ইচ্ছাকৃত ভাবে তাদেরকে ত্রিভূজ না দিয়ে বৃত্ত দিয়ে দেন” বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। এরসাথে বিভিন্ন সময়ে তিনি একাধিক ছাত্রীকে নানান অযুহাতে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে যৌন হযরানী করা সহ ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে উত্ত্যাক্ত করা সহ নানাভাবে কু-প্রস্তাব দিয়েছেন।
শিক্ষক গওছল কবির বিদ্যালয়ে এবং প্রাইভেট কোচিং-এ ধারাবাহিক ভাবে শিশু ছাত্রীদের যৌন হয়রানী এবং তাঁর নিকটে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করার ঘটনায় অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ক্ষুব্ধ অভিভাভকরা ঘটনার তদন্ত সহ তাঁর শাস্তির দাবীতে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে স্বাক্ষরকারী এবং স্বাক্ষর করার বাইরে অভিযোগ করা অভিভাবকদের মধ্যে কলেজ ও স্কুলের শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী এবং কৃষক সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া শারমীন ঘটনার তদন্তে প্রথমে একটি কমিটি গঠন করে দেন। কিন্তু সেই কমিটির উপর সংক্ষুব্ধ হয়ে অভিভাবকরা নতুন তদন্ত কমিটির আবেদন জানালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া শারমীন নতুন করে সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেদেন।
এ বিষয়ে তালা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আরাফাত হোসেন জানান, ৬ নভেম্বর (সোমবার) তদন্ত শুনানী হয়েছে, খুব শীগ্রই তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করলে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এব্যপারে অভিযুক্ত শিক্ষক গওছল কবির তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা ও হয়রানীকর বলে দাবী করে বলেন, তালা শহীদ আলী আহম্মদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সীমাহীন দূর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি চলছে, কয়েকজন শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নানান ষড়যন্ত্র ও বদলি করাতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম এবং ছাত্রলীগের নেতা ছিলাম। প্রশাসনের বড় বড় পর্যায়ে আমার নিজস্ব লোক রয়েছে, আমাকে এরা কিছুই করতে পারবেনা। আমিও এমন শতাধিক ছাত্রী দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করাতে পারি।
তালা শহীদ আলী আহম্মদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অলোক তরফদার জানান, ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ও শিক্ষার্থীদের হয়রানীর অভিযোগ উঠেছিলো। সেসময় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত হয়। এবিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানানো হয় এবং শিক্ষক গওছল কবিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ জানানো হয়।
এদিকে, তদন্ত এবং ঘটনার মোটিভ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বিতর্কীত শিক্ষক গওছল কবির ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন এবং অভিভাবক ও সাংবাদিকদের হয়রানী করতে অপতৎপরতা শুরু করেছে।
###