ডেস্ক রিপোর্ট ::
টানা চতুর্থবারের মত জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক বিজয়ের পর বুধবার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ শপথ নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার গঠিত হবে নতুন মন্ত্রিসভা এবং মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠান। নতুন সরকারের এই যাত্রা শুরুর শুভক্ষণে সাতক্ষীরাবাসীর চাহিদা অনুযায়ী প্রত্যাশা অনেক।
বৃহৎ জনগোষ্টির আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে এবারে সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনের প্রার্থী মনোনয়নে। জাতীয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশে থেকে তাকে সার্বক্ষণিক সহায়তা করেছেন এমন প্রবীন ব্যক্তিত্বের সাথে দুইজন নবীনকে প্রার্থী মনোনীত করে দলের বিজয় নিশ্চিত করতে বিচক্ষণ প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় জনগণের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। ঠিক একইভাবে এক সময়ের মৌলবাদ অধ্যুষিত এই জনপদে বিরোধী মতকেও ইতিবাচক রাজনীতির পক্ষে টানতে একটি আসনে প্রার্থী না দিয়ে সেখানে অন্যদলের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ তৈরী করে দিয়েছেন। ফলে জনগণের প্রত্যাশিত বিজয় অর্জিত হয়েছে সাতক্ষীরার প্রতিটি আসনে। আর এই বিজয়ের সাথে সাথে সাতক্ষীরার মানুষের আশা আকাক্সক্ষা পূরণে নতুন প্রত্যাশার ডানা মেলতে শুরু করেছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেত্রীত্বে সরকার গঠনের পর সাতক্ষীরা জেলায় পরিকল্পিত উন্নয়নের জোয়ার বইতে শুরু করে। সে সময়ের ৫জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ছিল এক সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক। মন্ত্রী পরিষদে স্থান পান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসক ডা. আ ফ ম রুহুল হক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে সারাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পাশাপাশি জেলার উন্নয়নেও তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। জেলার নবীন-প্রবীন রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সাথে নিয়ে সে সময়ে জাতীয় পার্টির দুইজন সংসদ সদস্যসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের সমন্বিত প্রচেষ্ঠায় জেলার উন্নয়নে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। ২০১০ সালের ২৩ জুলাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার আইলা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে শ্যামনগরে এক জনসভায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের ঘোষণা দেন। এরপরপরই শুরু হয় প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের কাজ। সে সময়ে সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য এম এ জব্বারের বাড়ি ভাড়া নিয়ে পরের বছর শুরু হয় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম। শহরের যানজট নিরসনে বাইপাস সড়ক নির্মাণ, নাভারণ-সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ রেল লাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই, কপোতাক্ষ পাড়ের দু:খ জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের কাজ।
কিন্তু উন্নয়নের সেই ধারা থমকে দাঁড়ায় ৫ বছর পর নতুন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব গ্রহণের পর। জেলার সামগ্রীক উন্নয়নে সকলের ঐক্যমত্যের পরিবর্তে নির্বাচনী এলাকা কেন্দ্রীক কর্মকান্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কেউ কেউ। জেলা সদরের বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচি ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় অন্যদেরকে। যোগ্য ব্যক্তিরা সম্মান না পেয়ে অনেকেই নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন। সাতক্ষীরায় একজন নিজেকে রাজা-মহারাজা ভাবতে শুরু করেন। তার বিরূপ প্রভাব পড়ে সামগ্রীক উন্নয়নে।
এবারের নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রত্যাশিত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ছিটকে পড়েছেন নৌকার সাবেক তিন সংসদ সদস্য। তাদের দুইজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় অংশ নিলেও একজন পরিস্থিতি বুঝে মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান। অপরজন গো-হারা হেরেও এখনো জনগণের সেন্টিমেন্ট উপেক্ষা করে ভুল-ভাল বকে যাচ্ছেন। প্রার্থী মনোনয়ন থেকে শুরু করে ভোটের ফলাফলে জনগণের পাল্স তিনি এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না। ফলে এখনো হয়তো কিছুদিন তার এই আকডুম-বাগডুম তৎপরতা দেখা লাগতে পারে।
নবনির্বাচিত চারজন সংসদ সদস্যের মধ্যে তিনজনই নতুন। অপরজন ডা. আ ফ ম রুহুল হক এই দিয়ে পরপর চারবার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্ঠা। সরকারের পক্ষে জাতীয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গত ১৫ বছর তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছেন। এবারের পার্লামেন্টে তিনিই সম্ভবত সবচেয়ে প্রবীন সদস্য। বয়সের কারণে অনেক প্রবীন রাজনীতিবীদ এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেলেও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে ডা. রুহুল হকের যে প্রয়োজন রয়েছে তা এই নির্বাচনের ফলাফলে এলাকার জনগণ প্রমান করে দিয়েছে। কারণ প্রবীনদের অনেকে নৌকার মনোনয়ন পেয়েও এবার জিতে আসতে পারেন নি। সাতক্ষীরায় অপর তিনটি আসনে নির্বাচিতদের মধ্যে ফিরোজ আহমেদ স্বপন ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন। ফলে তিনি তার যোগ্যতা প্রমান করে এবারে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এসএম আতাউল হক দোলন পরিবার আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকেই এই দলের রাজনীতির সাথে মিশে আছেন। তার বাবা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যসহ পরবর্তী দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। আতাউল হক দোলন নিজেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং দুইবারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান।
জেলায় রাজনীতির সাথে যুক্ত থেকে গত প্রায় ৫০ বছর মানুষের সাথে মিশে আসেন আশরাফুজ্জামান আশু। তিনি জেলা জাতীয় পাটির দীর্ঘদিনের সাধারণ সম্পাদক এবং একজন পোড় খাওয়া রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থা, ভোমরা স্থল বন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়শেন, চেম্বার অব কমার্সসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সামাজিকভাবে পরিচিত ব্যক্তি হিসেবে সব শ্রেণির মানুষের সাথে তার রয়েছে উঠাবসা। ফলে জেলা সদরে বিরোধী দলের সংসদ সদস্য হয়েও জেলার উন্নয়নের প্রশ্নে অন্যন্যদের সাথে কাজ করতে তার অসুবিধা হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাছাড়া ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও তিনি যেভাবে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী নেততৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন তা এককথায় অভূতপূর্ব। ফলে আগামী ৫ বছর জেলার উন্নয়নে নবনির্বাচিত চারজন সংসদ সদস্য সমন্বিতভাবে কাজ করবেন এ প্রত্যাশা সাতক্ষীরার সর্বস্তরের মানুষের।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা এখন ঝড় জলোচ্ছ্বাস জলাবদ্ধাসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত জেলা হিসেবে জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর সারাদেশে যে উন্নয়নের জোয়ার শুরু হয়েছে তা থেকে বাদ যায়নি এই জেলা। রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট বিদ্যুৎসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে প্রতিটি সেক্টরে। মেডিকেল কলেজ, ম্যাটস, বাইপাস সড়কসহ নতুন নতুন অনেক বড় ধরনের উন্নয়ন সম্পন্ন হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে এখানকার নদী ভাঙন ও জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে।
কিন্তু গত দশ বছরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়হীনতা এবং কারো কারো দুর্নীতিসহ নানা কারণে অনেক ক্ষেত্রেই উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে যুদ্ধকরে টিকে থাকা এই এলাকা অনেক ক্ষেত্রেই সারাদেশ থেকে পিছিয়ে পড়েছে। অনেক বড় বড় উদ্যোগে বাস্তবায়নের গতিও ধীর। আবার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঝড় জলোচ্ছ্বাস জলাবদ্ধতা সব অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে। আর এর ফলে বাড়ি ঘর সহায় সম্পদ হারিয়ে প্রতিবছর বহু মানুষকে বাস্তুচ্যুত হতে হচ্ছে। স্থায়ীভাবে অস্থায়ীভাবে তারা এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। দেশে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা প্রতিবছর বেড়েই চলছে।
এই পরিস্থিতির অবসানে এখন জরুরিভাবে বড় ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের অন্য কোন বিকল্প নেই। আর সেজন্য দরকার এই এলাকার মানুষের জন্য জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা। এখানে প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকার জন্য সক্ষমতা অর্জনে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্ঠির পর সুগম করা প্রয়োজন। আবার পদ্মা সেতুর এপারের সবচেয়ে দুরবর্তী এই জেলার সাথে দেশের অন্যন্য স্থানের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ করাও প্রয়োজন।
সেই প্রয়োজনের তাগিদে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত মুন্সীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে নাভারণ পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করা এবং একই সাথে মোংলা-খুলনা-সাতক্ষীরা পৃথক রেললাইন নির্মাণ করার বিষয়টি ভবিষ্যত পরিকল্পনায় অর্ন্তভুক্ত করা।
ইতোমধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ হতে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য জরুরিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও গত ১৩ বছরেও ভোমরা স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি। ইতোমধ্যে বসন্তপুর নৌবন্দর পুনরায় চালু করার বিষয়ে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ দ্রুত চালুর বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে। আন্তর্জাতিক বানিজ্যে এদুটি বন্দর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ ভারতের কোলকতা বন্দরের সবচেয়ে নিকটে এই বসন্তপুর ও ভোমরা স্থল বন্দরের অবস্থান।
প্রায় ৩ হাজার ৮৫৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই সাতক্ষীরা জেলার বর্তমান জনসংখ্যা ২২ লক্ষাধিক। জেলার বর্তমান ভোটারও ১৭ লাখ ৪৬ হাজার ২২৪জন। আয়তন এবং জনসংখ্যার আধিক্য থাকলেও উপজেলার সংখ্যা ৭টি হওয়ার কারনে সাতক্ষীরা এখনো “খ” শ্রেণির জেলা হিসেবে চিহ্নিত। একারনে এখানে উন্নয়ন বরাদ্দ “ক” শ্রেণির জেলার চেয়ে অনেক কম। এজন্য সাতক্ষীরা উপজেলার সংখ্যা একটি বাড়িয়ে “ক” শ্রেণির জেলায় উন্নীত করা প্রয়োজন।
সড়কপথে সুন্দরবন ভ্রমনের একমাত্র সুযোগ রয়েছে সাতক্ষীরা জেলায়। তাছাড়া জেলায় রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা। একারণে জেলায় পর্যটন শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও তার বিকাশে আজো কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের অভ্যন্তরে দর্শণীয় একাধিক পর্যটন স্পট নির্মাণ, সাতক্ষীরা রেঞ্জের নিকটবর্তি এলাকাকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা এবং সুন্দরবন কেন্দ্রীক পর্যটন জাতীয় রাজস্ব আয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
সাতক্ষীরায় বেকার সমস্যা সমাধানে শ্রমঘন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলার সরকারি পদক্ষেপ বাস্তবায়নের গতিও ধীর। সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস চালু অথবা মিেেলক ঘিরে আইটি পার্ক, চিংড়ি চাষের কারণে জমি হারানো এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বস্ব হারানো পরিবারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুনর্বাসন করে তাদের উদ্বাস্তু পরিস্থিতি থেকে রক্ষার পদক্ষেপ নেওয়া।
জেলার অধিকাংশস্থানে সুপেয় পানি নেই। কোথাও লবণাক্ত, কোথাও আর্সেনিক ও কোন কোন স্থানে মাত্রাতিরিক্ত আয়রনের কারনে এখানে নিরাপদ সুপেয় পানির সংকট বেড়েই চলেছে।
শহরে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে বাস টার্মিনাল স্থানান্তর ও ট্রাক টার্মিনাল স্থাপন জরুরি হয়ে উঠেছে। শিশুর বিকাশের জন্য জেলা সদর ও উপজেলা সদরে শিশুপার্ক বা শিশু বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেনি।
মোস্তাফিজ সৌম্য সাবিনাদের জেলায় কোন আধুনিক মানের স্টেডিয়াম, ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স গড়ে উঠেনি। কিন্তু সুযোগ পেলে এই জেলায় প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেড়ে উঠা ছেলে মেয়েদের অনেকেই দেশের জন্য অসংখ্য মোস্তাফিজ সৌম সাবিনা সৃষ্টি করতে পারতো।
সাতক্ষীরা’র অসংখ্য পূরাকীর্তিসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান, বধ্যভূমি, গণকবর সংরক্ষণ হয়নি। জেলা সদরে নির্মিত হয়নি মুক্তিযুদ্ধের শহিদ স্মৃতি সৌধ।
সাতক্ষীরায় উৎপাদিত আম-কুলসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল জাতীয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। কিন্তু এসব ক্রয় বিক্রয় এর জন্য সুনির্দিষ্ট কৃষি বাজার নেই। বিভিন্ন ফল, শাক-সবজী ও দুধ সংরক্ষণের জন্য চাহিদা অনুযায়ী আধুনিক হিমাগার ও সংরক্ষণাগার নির্মিত হয়নি।
মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে জেলার বিভিন্ন ফিডার রোডে চলাচলরত হাজার হাজার ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও ইঞ্জিন ভ্যানের আধুনিকায়ন শুধু সাতক্ষীরা নয় সারাদেশের এখন সময়ের দাবী। এসব যানের ফিটনেস নেই-লাইসেন্স নেই, নেই চালকদের প্রশিক্ষণ। কিন্তু হাজার হাজার বেকার যুবক ও তাদের পরিবার এই যানের উপার্জনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরায় এ সংখ্যা দেশের অন্য যে কোন এলাকার চেয়ে অনেক বেশি।
জেলার সাথে সকল উপজেলার সরাসরি যাতায়াতের জন্য আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থা ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত গড়ে উঠেনি। লক্কর-ঝক্কর ফিটনেসবিহীন অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে সড়কে। সরকারি বা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বিমানের অফিস না থাকায় যশোর বিমান বন্দরে যাতায়াতের জন্য বিমানের নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি।
সাতক্ষীরা পৌরসভা দেশের সুপ্রাচীন পৌরসভাগুলোর একটি। ১৮৬২ সালে এই পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এই পৌরসভা মানুষের বসবাস উপযোগী করার জন্য কোন মাস্টার প্লান করা হয়নি। দ্রুত সাতক্ষীরা বস্তি ঘিঞ্জি শহরে পরিণত হচ্ছে। অধিকাংশ এলাকায় নতুন ভবন নির্মাণ হলেও চলাচলের পর্যাপ্ত রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। নেই ফুটপাথ ও গুরুত্বপূর্ণস্থানে ওভারপাস। প্রধান সড়কগুলো ডিভাইডার দিয়ে দুই ও চার লেন না করায় শহরের প্রায় প্রতিটি রাস্তায় ঢাকার চেয়েও স্থানবিশেষ অসহনীয় যানজটে ভুগতে হচ্ছে মানুষকে। শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক এর বৃহৎ অংশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে দখল করা হয়েছে। জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য সাতক্ষীরা পৌরসভার নেই কোন পাবলিক অডিটরিয়াম। কোন ওয়ার্ডে গড়ে উঠেনি কমিউনিটি সেন্টার ও খেলার মাঠ। শহরে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন, শৌচাগার ও নারী বান্ধব শৌচাগার নেই। নেই শিশুপার্ক। দরিদ্র মধ্যবিত্ত জনসাধারণের প্রয়োজনে যেখানে সেখানে সড়ক দখল করে হকার্স মার্কেট গড়ে উঠেছে। নিউমার্কেট ভেঙে ফেলার পর নতুন করে সেটা আর নির্মাণ করা হয়নি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী ভাঙন ও জলাবন্ধতা কবলিত উপকূলীয় এলাকা ‘দুর্যোগ প্রবন এলাকা’ হিসেবে পরিচিত হলেও এই এলাকার উন্নয়নে পৃথক কোন অথরিটি গঠন করা হয়নি। দুর্যোগের কারণে এই এলাকা থেকে ব্যাপকহারে অভিবাসন বন্ধ করতে বিশেষ বরাদ্দ ও অর্থনৈতিক প্রকল্প গৃহীত হয়নি। জলাবদ্ধ ও ভাঙন কবলিত এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্য স্থায়ী রেশনের ব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী, মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ পুন:নির্মাণ, সামগ্রীক উন্নয়ন অংশিদার সুনিদ্দিষ্ট এসডিজি অর্জনে অগ্রধিকার ভিত্তিতে গৃহীত ডেল্টা ও ব¬ুপ্ল¬ানের আওতায় টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হয়নি।
নদীর বেড়িবাধ ভাঙনরোধ ও জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে জেলার সকল নদী-খালের জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক প্রবাহ যতদূর সম্ভব পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদী-খালের সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা, উদ্ধারকৃত জমি ইজারা না দেওয়া, নতুন করে আর কোন অপ্রয়োজনীয় স্লুইস গেট ও ক্লোজার নির্মাণ না করা, গ্রাম-শহরের পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এমন স্থানে চিংড়ি চাষ বন্ধ করা, ইছামতি নদীর সাথে মরিচ্চাপ-খোলপেটুয়া নদীর সংযোগস্থাপনকারী কুলিয়ার লাবন্যবতি ও পারুলিয়ার সাপমারা খালের দু’পাশের ¯স্লুইস গেট অপসারণ করে জোয়ার-ভাটা চালু করা, ইছামতি থেকে মাদার নদীর (আদি যমুনা) প্রবাহ স্বাভাবিক করা, কালিগঞ্জের কাকশিয়ালি হতে গলঘেষিয়া হয়ে খোলপেটুয়া নদী পুন:খনন করা, নিচু বিলগুলো উচু করতে টিআরএম এর ব্যবস্থা করা, সাতক্ষীরা শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত প্রাণ সায়র খালের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং বেতনা ও মরিচ্চাপের সাথে সংযুক্ত করা, নদী খালের নেট-পাটা অপসারণ করার মতো বিষয়গুলো আজো যথাযথ গুরুত্ব পাইনি।
সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কের মেডিকেল কলেজের অংশটি লিংক রোড় হিসেবে চালু করে মূল বাইপাস সড়কটি আলিপুর চেকপোস্টে ভোমরা সড়কের সাথে সংযুক্ত করা, জেলার চলাচলে অযোগ্য রাস্তাঘাট সংস্কার ও পুন:নির্মাণ করা, আশাশুনির সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাতক্ষীরা শহরের পূর্বাংশে প্রস্তাবিত বাইপাস সড়ক দ্রুত নির্মাণ করা, ঢাকার সাথে সাতক্ষীরার দূরত্ব কমিয়ে আনতে মাওয়া-ভাঙ্গা-নড়াইল-নওয়াপাড়া-চুকনগর-সাতক্ষীরা সড়ক নির্মাণ করার বিষয়টি দ্রুত ভবিষ্যত পরিকল্পনায় জরুরি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
সাতক্ষীরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের সরকারি পরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও তা বাস্তবায়নে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই। শ্যামনগরের গাবুরা ও পদ্মপুকুর এবং কয়রা উপজেলার সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে একাধিক ব্রিজ নির্মিত হওয়া দরকার। জেলা সদরের সাথে তালা উপজেলা সদরের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরল সোজা সড়ক নির্মাণ ও প্রশস্থ করার বিষয়টিও উন্নয়ন পরিকল্পনায় অর্ন্তভুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
এধরনের হাজারো সমস্যা সমাধানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনোনীত এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ ভুমিকা রাখবেন এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় গতি আনতে হলে ডা. আ ফ ম রুহুল হকের মতো দুরদৃষ্টি সম্পন্ন অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্বকে মন্ত্রিপরিষদে স্থান দেওয়াটা সময়ের দাবী। তাছাড়া শুধু সাতক্ষীরার প্রয়োজনে নয়, সারাদেশের প্রয়োজনেই রুহুল হকের মতো ব্যক্তিকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হবে বলে সাতক্ষীরাবাসী বিশ্বাস করে। একই সাথে সাতক্ষীরার দুইজন তরুণ উদীয়মান নবননির্বাচিত সংসদ সদস্য ফিরোজ আহমেদ স্বপন ও এসএম আতাউল হক দোলনের যেকোন একজনকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলে হাজারো সমস্যায় জর্জরিত সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নে ভুমিকা রাখার পাশাপাশি মন্ত্রিসভার প্রবীনদের সংস্পর্শে থেকে আগামীদিনে সারাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে সাতক্ষীরাবাসী বিশ্বাস করে।
এই সকল বিশ্বাস প্রত্যাশার সাথেই আগামী ৫ বছর জেলার উন্নয়নে নির্বাচিত চারজন সংসদ সদস্য প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবীদদের সাথে নিয়ে একসাথে সমন্বিতভাবে কাজ কাজ করবেন এ প্রত্যাশা সকলের।
##