॥ এম কামরুজ্জামান ॥
————————–
মাত্র কয়েক দিন আগেরই শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একজন গনমাধ্যম কর্মী হিসেবে চেষ্টা করেছি সাতক্ষীরার চারটি নির্বাচনী এলাকার যারা প্রার্থী হয়েছিলেন সাতক্ষীরার উন্নয়ন নিয়ে তাদের ভাবনার কথা তলে ধরার। প্রার্থীরা নির্বাচিত হতে পারলে এলাকার উন্নয়নে তারা কি কি কাজ করনেব সেই প্রতিশ্রুতি মানুষের সামনে তুলে ধরেছি। এখন দেখার পালা নির্বাচিত এমপি’রা তাদের প্রতিশ্রুতি কতোটুকু বাস্তবায়ন করনেব।
সাতক্ষীরার মানুষ খুবই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। তাদের প্রত্যাশা নির্বাচিত এমপিরা সাতক্ষীরার সামগ্রিক উন্নয়নে ভ’মিকা রাখবেন।
আমি খুব বেশি অতীত ঘাটতে চাইনে। কারন অতিত ঘাটতে গেলে অনেক এলাকার দুর্নীতির খতিয়ান লিখে শেষ করা যাবে না। বিশেষ করে সাতক্ষীরায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে দুর্নীতি হয়েছে তা সবার মুখে মুখে। সদ্য সাবেক কতিপয় এমপি টানা দুইবার নির্বাচিত হয়ে সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে লাখ নয়, কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নিজের ভাই-বোন, স্বজনদের বানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্টানের সভাপতি। দেরীতে হলেও এদের মুখোশ উম্মোচন হতে শুরু করেছে। এদের মধ্যে অনেকেই দাবি করতেন তিনি জনগনের কর্মচারী। অথচ তিনি স্যার বলা খুব পছন্দ করত। জনগন তাকে স্যার না বলে ডাকলে তিনি খুবই মাইন্ড করতেন।
সদ্য সাবেক দুর্নীতিবাজ এসব এমপিরা সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কমপক্ষে ১০ লাখ, অধ্যক্ষ , প্রধান শিক্ষক, মাদ্রাসার সুপার নিয়োগে কমপক্ষে ৩০ লাখ, কর্মচারী নিয়োগে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন। এরই সাথে তালমিলিয়ে সাতক্ষীরার চিহ্নিত কয়েকজন অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা হয়েছেন কোটিপতি। এসব শিক্ষাদস্যুদের অনেকেই কয়েক কোটি টাকা খরচ করে হাকিয়েছেন বিলাশ বহুল বাড়ি ও গাড়ি। অথচ কয়েক বছর আগেও তাদের ছিল না তেমন মাথা গুজাঁর ঠাঁই। টাকার উৎস খুঁজতে গেলেই এসব শিক্ষাদস্যুর থলের বিড়ার বেরিয়ে আসবে ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছুদিন আগেই সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কয়েক কোটি টাকার টেন্ডার সদ্য সাবেক একজন এমপি সেখানে মাস্তান নিয়োগ করে প্রকাশ্যে টেন্ডারবাজি করেছেন। আলোচিত এই টেন্ডারবাজির বিষয়টি খোদ প্রধানমন্ত্রীর নজর পর্যন্ত গড়ায়। যে কারনে ওই জনপ্রতিনিধি দুর্নীতিবাজ এমপির তালিকাভূক্ত হয়ে এবার দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন বলে জানাগেছে।
পরাজিতদের নিয়ে আর আলোচনা করতে চাইনে। এদের মহাদুর্নীতির কাহিনী ইতোমধ্যে ফাঁস হয়ে পড়েছে। কারো অজানা নয়।
সাতক্ষীরার চারটি আসনে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। ‘সাতক্ষীরা জামায়াত অধ্যুষিত’ এই গ্লানি আমাদেরকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। বার বার এই গ্লানি মুখে উচ্চারণ করে আমরা জিনেরা নিজেদেরকে খাটো করে ফেলেছি। এই গ্লানি থেকে আমরা মুক্তি চাই। আমরা আর ২০১৩ সালের সেই ভয়ংকর দৃশ্য দেখতে চাইনে। চাই সাতক্ষীরার সামগ্রিক উন্নয়ন।
সাতক্ষীরার নির্বাচিত চার জন এমপি’র মধ্যে তিন জনই নতুন। সাতক্ষীরা-৩ আসনে নির্বাচিত এমপি ডা: আ ফ ম রুহুল একমাত্র পুরাতন। আমরা আশা করি চারজন এমপি একটেবিলে বসে সাতক্ষীরাকে নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করবেন । চায়ের টেবিলেই তৈরী করবেন অবহেলিত এই জেলার উন্নয়নের রুপরেখা । পদক্ষেপ গ্রহন করবেন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সাতক্ষীরার উন্নয়ন নিয়ে ভাবেন এমন কয়েকজন আমাকে ফোন করেছিলেন। তাদের বিশ্বাস নির্বাচিত এমপিদের সাংবাদিকরা কিছু বললে তারা সেটা শুনবে বা গুরুত্ব দিয়ে সেমতো কাজ করবে।
তাদের প্রধান এবং প্রথম দাবি রেল লাইন স্থাপন। নাভারন থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইন চালু হলে সাতক্ষীরার উন্নয়ন কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না । নির্বাচিত চার এমপি একযোগে যদি চেষ্টা করেন তাহলে রেল লাইন স্থাপন অতিসহজ ও দ্রুত হবে বলেও তারা মনে করেন। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন, উপকূলীয় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান, সাতক্ষীরায় উৎপাদিত মাছ , শাক-সবজি , আম-কুলসহ বিভিন্ন ফল সংরক্ষনের জন্য হিমাগার তৈরী করা, অর্থনৈতিক জোন তৈরী করা, ভোমরা স্থল বন্দরে সব ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করা। বিশ্বঐতিহ্যবাহী সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র তৈরী করা। কারন বাস বা যে কোন পরিবহন থেকে নেমেই সুন্দরবন দেখার একমাত্র জায়গা হলো সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ। সাতক্ষীরায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবী অনেক দিনের। এসব বিষয়গুলো নিয়ে অতিতে নির্বাচিত এমপিরা এক টেবিলে বসেছেন এমন কোন তথ্য আমাদের জানানেই।
সাতক্ষীরার সাধারন মানুষ দেখতে চায়, নির্বাচিত চার এমপি অতিশিঘ্রই জনগনের দাবী, আশা-আকাঙ্খা , এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এক টেবিলে বসবে। চায়ের টেবিলে বসে তারা সাধারন মানুষকে ম্যাসেস দিবে যে, আমরা বসেছি। তারা আবারও প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলবে, সুষম উন্নয়নের চিত্র দেখতে অপেক্ষা করুন।
সাতক্ষীরার সাধারন মানুষ সেই দিনের অপেক্ষায়…।
লেখক : গনমাধ্যমকর্মী