পলাশ কর্মকার ::
ধান হাটে ওল’ গ্রামীণ এই প্রবাদটির সত্যতা মিলেছে কপিলমুনি বাজারে। দেশের বৃহত্তম হাট-বাজার কপিলমুনি বাজারের প্রসিদ্ধ ধান্যচত্বরটিতে (বিনোদ চত্ত্বর) এখন ধানের বদলে ওল কচুসহ হরেক রকম পণ্যের পসরা সাজিয়ে চলছে হরদম বেচাকেনা। এ কারণে প্রসিদ্ধ ধান্যচত্বরটি তার অস্তিত্ব হারিয়েছে। কপিলমুনি জনপদের মানুষের ভাগ্যন্নোয়নে প্রখ্যাত প্রয়াত দানবীর রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু বাংলা ১৩৩৯ সনে বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। নিজেকে তিলে তিলে বঞ্চিত করে এই জনপদের মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতে তাঁর কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে তিনি আধুনিক কপিলমুনি গড়ে করেন।
কপিলমুনিতে বিনোদগঞ্জ বাজার প্রতিষ্ঠা করার পর ভিন্ন ভিন্ন পণ্য বিকিকিনির জন্য তিনি পৃথক পৃথক জায়গা তৈরি করেন। এর মধ্যে ছিল হলুদ হাট, পান হাট, মুরগি হাট, চারা হাট, সবজি হাট ও ধান হাট উল্লেখযোগ্য। এছাড়া মাছ পট্টি, চা-পট্টি, চাউল পট্টি, লোহা পট্টি, তামাক পট্টি, কাপড়পট্টি, মাংস পট্টি, মিষ্টিপট্টি, কুড়াপট্টিও নির্মাণ করেন। খোলা হাটের পাশাপাশি এসব পণ্যের জন্য তিনি মূল্যবান ও টেকসই প্রায় এক ডজন বড় বড় চাঁদনী নির্মাণ করেন। এ কারণে অল্পদিনেই কপিলমুনি বাজারের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে নিজ জেলার গন্ডি পেরিয়ে দেশব্যাপী। তবে বাজার প্রতিষ্ঠার পর সব হাটকে ছাড়িয়ে ধান হাটটি অল্প দিনের মধ্যে প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে। সপ্তাহে রবি ও বৃহস্পতিবার এই দুইদিন হাটবারে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা হাজার হাজার মন ধানে বিরাট ধান্য চত্বরটি ভরে যেত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে ধান কিনতে আসতো। কিন্তু বর্তমানে সেই প্রসিদ্ধ ধানহাট আর নেই। ধান হাটে এখন ধান ওঠে না। সেখানে ওল কচু সহ নানা সবজির দোকানের পাশাপাশি ফলের দোকান, পুরাতন কাপড়ের দোকানসহ হরেক রকম পণ্যের বেচাকেনায় ধান্য চত্বরটি একেবারে হারিয়ে গেছে। এ কারণে এখানে আর কেউ ধান আনেনা। দু-চার মন ধান এখানে আসলেও সেগুলো বেচাকেনা হয় ধান্য চত্বর সংলগ্ন প্রধান সড়কের পাশে।
কপিলমুনি (বিনোদগঞ্জ) বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি দ্বিজেন সাধু বলেন, অভিভাবকহীন এই বিখ্যাত বাজারটির বৈচিত্র হারিয়েছে। রায় সাহেবের গড়ে তোলা বাজারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য তিনি জোর দাবি জানান।
একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দেশের এই বৃহত্তম বাণিজ্যিক মোকামের চরম অব্যবস্থাপনায় ও ব্যাপক দুর্নীতির কারণে কপিলমুনি বাজারের স্বাতন্ত্রতা হারিয়েছে, হারিয়েছে জৌলুষও। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি দ্র্রুত কপিলমুনির প্রসিদ্ধ ধান্যচত্ত্বরটি অবমুক্ত করলে ধান্যচত্ত্বরটি আবার প্রাণ ফিরে পাবে। সার্থক হবে রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর ত্যাগে গড়া এই বাজার গড়ে তোলা। এ বিষযয়ে সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকাবাসী।
##