অনলাইন ডেস্ক ::
চলতি বছরের সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণ মৌসুম রোববার থেকে শুরু হয়েছে। এবার গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। সুন্দরবনের প্রায় সর্বত্রই গোলপাতা জন্মে থাকে। তবে, নদী ও খালের পাড়ে এবং নতুন চরে অধিক পরিমাণে গোলপাতা জন্মে তুলনামূলকভাবে কম দাম, শক্ত ও অধিক টেকসই হওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের ঘরের ছাউনির কাজে ব্যবহৃত হয় ‘গরিবের ঢেউটিন’ হিসেবে খ্যাত সুন্দরবনের গোলপাতা। ঘরের চালে গোলপাতার ছাউনি উপকূলসহ বিভিন্ন জেলায় খুব জনপ্রিয়। এ পাতার ছাউনি ঘর গরমের সময় ঠাণ্ডা ভাব এবং শীতের সময় গরমভাব অনুভূত হয়। গোলপাতা দিয়ে ভালোভাবে ঘরের ছাউনি দিলে ৪ থেকে ৫ বছর পার হয়ে যায়। সুন্দরবন থেকে যারা গোলপাতা সংগ্রহ করেন তাদের বলা হয় বাওয়ালি। প্রতিবছর গোল গাছের পাতা কেটে ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন হাজার হাজার বাওয়ালি। বন বিভাগের বেধে দেওয়া সময় অনুযায়ী গোলপাতা সংগ্রহ করতে হয়। রোববার থেকে চলতি বছরের সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণ মৌসুম শুরু হয়েছে। চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ২টি কূপে (গোলপাতা কাটার এলাকা) ও সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের দুটি কূপে এখন চলছে গোলপাতা আহরণ। এ মৌসুমে গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিকটন।
জানা যায়, ৫০০ মণ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নৌকাগুলো সুন্দরবনে থেকে গোলপাতা আহরণ করতে পারবে। সুন্দরবনের গোলপাতা ঘর ছাউনিতে ব্যবহার হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু রিসোর্ট ও বাংলো বাড়িতে শোভাবর্ধণের জন্যও গোলপাতার ছাউনি দেওয়া হয়। মৌসুমে প্রতি কুইন্টাল গোলপাতা আহরণে ভ্যাট ব্যতিত রাজস্ব নেয়া হচ্ছে ৬০ টাকা। দিনদিন গোলপাতার চাহিদা কমে যাওয়ায়, আগের তুলনায় গোলপাতা সংগ্রহকারীর সংখ্যা কমেছে।
জানা যায়, গোলপাতা বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ প্রজাতি। গোলপাতা সুন্দরবনের একটি অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক অর্থকরী সম্পদ। নামে গোল হলেও গোলপাতা আসলে গোলাকার নয়, লম্বা লম্বা। এর পাতা সবুজ বর্ণের অনেকটা নারিকেল গাছের পাতার মতো। বহুমুখী ব্যবহার ও সহজলভ্যতার কারণে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের প্রায় ১৬টি জেলার নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘরবাড়ি ও আশ্রয়স্থাল নির্মাণে গোলপাতা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত গোলপাতা সংগ্রহের কাজ চলে।
বাওয়ালিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুন্দরবন থেকে বনজদ্রব্য আহরণ সংকুচিত এবং চাহিদা কমে যাওয়ায় গোলপাতা সংগ্রহে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে বাওয়ালীরা। বাজারে গোলপাতার চেয়ে এখন টিনের প্রচলন বেশি। এ কারণে অনেকেই বাওয়ালী পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।
সুন্দরবন বনজীবী ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ফেডারেশনর সভাপতি মীর কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণ মৌসুমে এবার তেমন সাড়া মিলছে না বাওয়ালীদের। তুলনামূলকভাবে গোলপাতার চেয়ে টিনের দাম কম হওয়াতে দিনকে দিন এর ব্যবহার কমছে। গোলপাতার সঙ্গে পূর্বের ন্যায় গরান কাঠ কাটার অনুমতি দিলে বাওয়ালীদের আগ্রহ বাড়বে। গোলপাতা যেমন এক বছর না কাটলে পাতা শুকিয়ে মারা যায় তেমনি গরানের ঝাড় পরিস্কার না রাখলে গাছ বৃদ্ধি পায় না। তাই গোলপাতার সঙ্গে গরান কাটার অনুমতির দাবি জানান তিনি। বন কর্মকর্তারা জানান, ২৮ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দুই মাসব্যাপী বাওয়ালীরা সুন্দরবনে নির্ধারিত স্পট থেকে গোলপাতা আহরণ করবেন। একটি নৌকায় সর্বোচ্চ ২০০ কুইন্টাল (৫০০ মণ) গোলপাতা বহন করা যাবে। অতিরিক্ত বহন করলে দ্বিগুণ টাকা জরিমানা করা হবে। গোলপাতা ছাড়া বাওয়ালীরা সুন্দরবন থেকে অন্য কোনো কাঠ সংগ্রহ করতে পারবেন না।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের (ডিএফও) ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, চলতি বছরের সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণ মৌসুম রোববার থেকে শুরু হয়েছে। এবার গোলপাতার লক্ষ্যমাত্রা খুলনা রেঞ্জে ৮ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে ৪ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন।
শ্যালা গোলপাতা কূপ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান বলেন, সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জে দুইটি গোলপাতার কূপ রয়েছে। একটি হলো শ্যালা গোলপাতা কূপ আর অপরটি হলো চাঁদপাই গোলপাতা কূপ। এই দুই কূপে এবার সাত হাজার মেট্রিক টন গোলপাতা সংগ্রহের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে।
##