অনলাইন ডেস্ক ::
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের ৩৩০ নাগরিককে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দু’জন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য ও চারজন বেসামরিক নাগরিক। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৪টায় দুই দফায় তাদের হস্তান্তর করা হয়।
এদিন সকালে উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে দেশটির নাগরিকদের ইনানীতে নৌবাহিনীর জেটিঘাটে নিয়ে আসা হয়। এ সময় আশপাশে ছিল বিজিবি ও র্যাবের সদস্যদের সতর্ক পাহারা। বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে প্রথম দফায় ১৬৫ জনকে জেটিঘাট থেকে জাহাজে করে পাঠানো হয় গভীর সমুদ্রে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমারের জাহাজে।
একই প্রক্রিয়ায় বিকেল ৪টার দিকে বাকি ১৬৫ জনকে জাহাজে তোলা হয়। ৩৩০ জনের মধ্যে ৯ জনকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছিল। তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে ইনানীতে নেওয়া হয়।
সকাল ৮টা থেকে ইনানীতে উপস্থিত ছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ে, বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমারবিষয়ক পরিচালক মো. রাকিবুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মো. রাশেদ হোসেন চৌধুরী, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান ও পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম।
সকাল সাড়ে ৯টার পর কোস্টগার্ডের জাহাজে ইনানী জেটিতে আসেন বিজিপির কর্নেল মায়ো থুরা নউংয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। তারা পৌঁছার পর দুই দেশের প্রতিনিধি দলের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পর তাদের হস্তান্তর করা হয়।
হস্তান্তর কার্যক্রম শেষে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সম্প্রতি এ সংঘর্ষের প্রভাব বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পড়ে। এ পটভূমিতে মিয়ানমারের বিজিপি, সেনা, পুলিশ, ইমিগ্রেশন ও বেসামরিক সদস্যরা প্রাণভয়ে পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে অস্ত্রসহ বিজিবির কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে বিজিবির তত্ত্বাবধানে অনুপ্রবেশকারীদের সম্পূর্ণ নিরস্ত্র করে আশ্রয় দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ১১ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩৩০ সদস্যকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য বিজিবিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবির রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদী হোসাইন কবীরের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পুলিশের প্রতিনিধির সমন্বয়ে ৫ সদস্যের একটি প্রত্যাবাসন কমিটি গঠন করা হয়। মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কমিটির সদস্যরা যোগাযোগ করে তাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ে বলেন, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উভয়পক্ষের সম্পর্ক আরও উন্নত হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনীর সদস্যদের নিজ দেশে পাঠানোর বিষয়টি বাস্তবায়ন করায় বাংলাদেশের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি। বিশেষ করে আমাদের গুলিবিদ্ধ লোকজনকে চিকিৎসা দেওয়ায় অশেষ ধন্যবাদ।
এদিকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় সঙ্গে করে আনা অস্ত্র ও গোলাবারুদ আপাতত তাদের ফেরত দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিজিবি সদরদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম।