ডেস্ক রিপোর্ট ::
বহুল আলোচিত সাতক্ষীরা পৌরসভা চলছে ইচ্ছাধীনভাবে। যার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে পৌরসভায় বাসিন্দারা। সম্প্রতি পানির বিল বৃদ্ধি করায় দাম কমানোর যৌক্তিক দাবিতে সোচ্চার হয়েছে নাগরিক কমিটিসহ সামাজিক সংগঠনগুলো। প্রতিটি সড়কের বেহালশদশা। বৃষ্টি নামলে পানি জমে ছোট ছোট পুকুরে পরিণত হয়। এতে মানুষের চলাচলের ব্যাপক বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। কোন বিষয়ে পদক্ষেপ না নিয়ে ইচ্ছাধীনভাবে চলছে পৌরসভার কার্যক্রম। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা মাঝে মাঝে বেতনের দাবিতে রাস্তায় ময়লার স্তুপ দিয়ে মানববন্ধন করে। গত ২-৩ দিন ধরে পৌরসভার রাস্তার লাইটগুলো রাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লাইট বন্ধ হওয়ায় ভূতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে সাতক্ষীরা পৌরসভা। পৌরসভার বাসিন্দাদের একটাই প্রশ্ন এই ভোগান্তির শেষ কোথায়?
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক এড. আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভা আমারা নাগরিক সেবা সঠিকভাবে পাই না। আমরা যারা সামাজিক আন্দোলনের সাথে সংযুক্ত পানি বিল বৃদ্ধি ও রাস্তাঘাট চরম জীর্ণ অবস্থা নিয়ে কথা বলি। বহু বার চেষ্টা করেছি প্রতিবাদ করার। তারা তোয়াক্কা করে না। বসবাসের অনুপযোগী শহরে পরিণত হয়েছে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা।
সাতক্ষীরা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, পৌরসভা চরম জীর্ণ অবস্থা। বসবাসের অনুপযোগী। একদিকে চেয়ার দখলের খেলা আরেক দিকে কর্মকর্তাদের চরম উদাসীনতা। মাঝখানে আমজনতা দুর্ভোগে। ইচ্ছামত চালাচ্ছে আমাদের পৌরসভা। তারা আমদের নিয়ে ভাবে না। তারা রাজা বাদশার মতো রাজ্য দখলের মতো মহড়া দিচ্ছে। জনগনকে প্রজা মনে করে। এই অবস্থা কতদিন দেখতে হবে তা কে জানে। রাস্তাঘাট চরম খারাপ। পানি নেই। পানির দাম চারগুণ বৃদ্ধি। লাইট জ্বলে না। পৌরবাসীর ভোগান্তির শেষ কোথায়?
১নং ওর্য়াডের বাসিন্দা মিতুল রহমান বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভা প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। কিন্তু অদক্ষদের পরিচালনায় সকল সুযোগ সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। ১নং ওর্য়াডের রাস্তাঘাটগুলো বর্ষায় বিলে-খালে পরিণত হয়েছে। মনে হয় চাষাবাদ করা যাবে।
২নং ওর্য়াডের বাসিন্দা রনি হোসেন মোল্লা বলেন, পৌরসভার ইচ্ছাধীন সিদ্ধান্তের কারণে আমরা নানাভাবে ভোগান্তিতে পড়ছি। পানি পাচ্ছি না ঠিকমত। পানি বিল চারগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেটা অসহনীয়। এখন দেখছি পৌর সভার রাস্তার রাতে লাইটগুলো অফ করে দেওয়া হয়েছে। বর্ষায় রাতে লাইট ছাড়া ভূতের শহরে পরিণিত হয়েছে সাতক্ষীরা পৌরসভা।
৩নং ওর্য়াডের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সাতক্ষীরা পৌর সভার সবচেয়ে অবহেলিত এলাকা ৩নং ওর্য়াড। জনবসতি বেশি হওয়ার আমাদের অঞ্চলে দুর্ভোগ বেশি। সঠিকমত পৌরসভা পানি সাপ্লাই দিচ্ছে না। পানির বিল বৃদ্ধি করে নিম্ন আয়ের মানুষের শ্বাসরোধ করা হয়েছে।
৪নং ওর্য়াডের বাসিন্দা মোস্তফা কামাল সোহাগ বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার বাণিজ্যিক কেন্দ্র আমাদের ওয়ার্ডে সুলতানা বড়বাজার। এখানে পৌরসভা সঠিক ব্যবস্থাপনা নেই। ময়লা নিস্কাশন সঠিকভাবে হয় না। বর্ষার সময় বাজারের ভিতর ছোট ছোট গর্তে পানি জমে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে ভিতর কাচামাল নষ্ট হয়ে ময়লা পরিনত হয়ে গন্ধে যাওয়ার মতো পরিবেশ নেই। কিন্তু বাজার পরিচালনা বিষয় কোন খেয়াল নেই। এই ভোগান্তি শেষ কোথায়।
৫নং ওর্য়াডের বাসিন্দা রাকিব হাসান রিমু বলেন, ইদানীং রাস্তা ঘাট এত পরিমাণ খারাপ হয়েছে যে আমাদের শহরে আসতে কষ্টকর হয়ে যায়। ভাঙা ছোট ছোট গর্তে পরিণত হয়েছে। মনে হয় আমরা দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করি। ইদানীং রাস্তার লাইটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চোর-ছ্যাচড়ার উপদ্রব বেড়েছে। সরারাত জেগে থাকতে হয় চোরের ভয়ে। আমরা এই ভোগান্তির লাঘব চাই।
৬নং ওর্য়াডের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার পুরাতন জনবসতি নিয়ে গঠিত। আমাদের ৬নং ওর্য়াড সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ আমাদের ওর্য়াডের পাশে অবস্থিত। আমাদের এলালায় রাস্তাগুলো সেই পুরানো জরাজীর্ণ হয়ে আছে। কোন উন্নয়ন করেনি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। পৌরসভা তাদের ইচ্ছেমত বাড়ির মতো পরিচালনা করে আমাদের জনগণের কোন মূল্যায়ন করে না। এভাবে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী নিয়ে মুষ্টিময় কিছু লোক ছেলে খেলা খেলতে পারেনা। কোনকিছু সঠিক নিয়মে চলছে না।
৭নং ওর্য়াডের বাসিন্দা ওসমান গণি বলেন, আমাদের ওর্য়াডে বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ বসবাস করে। আমাদের এলাকায় রাস্তাঘাট অনেক জরাজীর্ণ। ঠিকমত পৌরসভার সেবা পাই না।
৮নং ওর্য়াডের বাসিন্দা মুনসুর আহমেদ বলেন, নিউমার্কেট পলাশপোল এলাকায় নিয়ে গঠিত আমাদের ওর্য়াড। পলাশপোল এলাকার রাস্তা চরম ভাঙ্গা। ৯নং ওর্য়াডের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, পৌরসভার একটি মূল কেন্দ্র টার্মিনাল ও সদর হাসপাতাল। রাস্তাঘাট আস্ত নেই। সড়ক সংকীর্ণ হয়ে গেছে। পৌরসভার উদাসীনতা আজ ভোগান্তিতে ফেলেছে। এই ভোগান্তি কতদিন আমাদের ভোগ করতে হবে তা কেউ জানে না।